
কোভিড-১৯ অতিমারির সময়ে ইতিবাচক অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ধরে রাখতে সমর্থ দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশ ছিল অন্যতম। কিন্তু বর্তমানে এটি এমন লক্ষণ প্রত্যক্ষ করছে, যা তার চিত্তাকর্ষক অগ্রগতি রুদ্ধ করতে পারে : সরকারের রাজস্ব ভারসাম্যে ক্রমবর্ধমান ভিন্নমুখিতা; অর্থপ্রদানের পরিস্থিতির ভারসাম্যের অনিশ্চয়তা; বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডারের দ্রুত হ্রাস; জ্বালানি বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মাঝের ব্যবধান ; এবং মুদ্রাস্ফীতিমূলক প্রবণতা। অতিমারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে উদ্ভূত বহিরাগত ধাক্কা দেশের অর্থনৈতিক দুর্বলতাকে প্রকাশ্যে এনেছে এবং ২০২২ সালের জুলাই মাসে দেশটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সতর্কতামূলক ঋণের আবেদন করতে বাধ্য হয়েছে। এই প্রতিবেদনটিতে আন্তঃসংযুক্ত ম্যাক্রো ইকোনমিক বা সামষ্টিক অর্থনীতি এবং উন্নয়নের পরামিতিগুলির বিষয়ে অশনি সংকেত দেওয়া হয়েছে এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতির সেই অন্তর্নিহিত শক্তিগুলির রূপরেখা নির্ণয় করা হয়েছে, যা আগামী দিনে দেশটির বৃদ্ধির পথকে সুনিশ্চিত করতে পারে।
আরোপণ : সৌম্য ভৌমিক এবং নীলাঞ্জন ঘোষ, ‘আ গেম অফ শ্যাডো: গ্রোথ, ডিস্ট্রিবিউশন এবং সিস্টেমিক শক ইন দ্য বাংলাদেশ ইকোনমি,’ ওআরএফ অকেশনাল পেপার নং ৩৮০, নভেম্বর ২০২২, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন।
ভূমিকা
বিশ্বের দ্রুত ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির একটি হয়ে ওঠার বাংলাদেশের বাস্তবতাকে প্রায়শই ‘দারিদ্র দূরীকরণের মডেল’(১) সংক্রান্ত উন্নয়নশীল আখ্যানের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলা হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন ও স্বাধীন দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার সময় বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ হওয়া থেকে শুরু করে বাংলাদেশ বর্তমানে অনেকটা পথই অতিক্রম করেছে। ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে বৃহৎ পর্যায়ে বাণিজ্যিক উদারীকরণ, ২০০০-এর দশকের বছরগুলিতে উচ্চ অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং ২০১০-এর দশকের মাঝামাঝি বৃহৎ মাত্রায় দারিদ্র্যের উদারীকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজেদের বৃদ্ধি এবং উন্নয়নের যাত্রা অব্যাহত রাখে। ১৯৯১ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে দারিদ্র্য ৪৩.৫ শতাংশ থেকে ১৪.৩ শতাংশে নেমে এসেছে।(ক)(২)
চিত্র ১ : বাংলাদেশের দারিদ্র্যের মাথাপিছু অনুপাত ১.৯০ মার্কিন ডলার/দিন (২০১১ পিপিপি) (২০০০-২০১৬)
২০২০ সালে কোভিড-১৯ চলাকালীন যখন ভারত-সহ অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশেই নেতিবাচক বৃদ্ধির হার লক্ষ করা গিয়েছে, তখন বাংলাদেশ ৩.৪ শতাংশ ইতিবাচক বৃদ্ধির হার প্রত্যক্ষ করেছিল।(৪) ২০২১-২২ অর্থবর্ষে দেশটির মাথাপিছু গ্রস ডোমেস্টিক প্রডাক্ট (জিডিপি) ছিল ২৫০৩ মার্কিন ডলার, যা দক্ষিণ এশিয়ার মাথাপিছু গড় অর্থাৎ ২১৭৬ মার্কিন ডলারের তুলনায় অনেকটায় বেশি।(৫)
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রধান চালিকাশক্তি হল বস্ত্র ও রেডিমেড পোশাক (আরএমজি) শিল্প। দেশের তরুণ প্রজন্ম এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল ভাণ্ডারের মতো পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদ শিল্পকে বিকশিত করতে সাহায্য করেছে। শিল্পটি শ্রমকেন্দ্রিক হওয়ায় দেশীয় কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে; তা দেশের রফিতানিমুখী শিল্পায়নের পথকেও গতি দিয়েছে।(খ)
তা সত্ত্বেও একই সময়ে, ১৯৮০ সাল থেকে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ মানুষ দেশের জাতীয় আয়ের ১৬.৩ শতাংশের অধিকারী।(৬) এই অর্থনৈতিক বৈষম্যের পরিণতি সম্ভবত সংখ্যা ও তীব্রতায় বাড়তে থাকা ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ-সহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফলে প্রত্যক্ষ করা যেতে পারে। এই বিপর্যয়গুলি শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির উপরেই ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে না, একই সঙ্গে গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে অভিবাসনের ধরনের অস্থিতিশীলতাকে তুলে ধরে। পরিসংখ্যান বলছে যে, শহরের বস্তি এলাকায় বসবাসকারী জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ(৭) সাম্প্রতিক বছরগুলিতে নদী তীরবর্তী অঞ্চলে বন্যার কারণে গ্রামীণ এলাকা ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে। ২০২০ সালের মে মাসে যখন কোভিড-১৯ অতিমারি প্রথম প্রকট হয়ে ওঠে, তখন বাংলাদেশ তার ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, আম্ফানের সম্মুখীন হয়েছিল, যা দেশের ন’টি জেলা জুড়ে দশ লক্ষেরও বেশি মানুষকে প্রভাবিত করে এবং এর ফলে প্রায় ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়।(৮)
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণমকুবের জন্য অনুরোধকারী দক্ষিণ এশিয় দেশগুলির মধ্যে এখন বাংলাদেশও নাম লিখিয়েছে, যার ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।(৯) দেশটি ২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (এডিবি) থেকে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পাওয়ার প্রত্যাশা করছে। এর পাশাপাশি বিশ্ব ব্যাঙ্কের (ডব্লিউবি) কাছ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আরও ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পাবে। এ ছাড়া সরকারের দূষণমুক্ত বৃদ্ধি কর্মসূচির জন্য ৪০০-৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ইউক্রেন সংঘাতের প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য নতুন করে আরও ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণের জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্কের কাছে আবেদন করছে।(গ)
চিত্র ২ : বাংলাদেশের সামগ্রিক ঋণের বোঝায় দ্বিপাক্ষিক ঋণের অংশ (২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত)
অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য সরকারের তরফে বেশ কিছু স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত বহুমুখী সংস্কারমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের বৃদ্ধির কৌশলকেই পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ করে দেয়। প্রথম দিকে আইএমএফ এবং অন্যান্য বহুপাক্ষিক সংস্থার কাছ থেকে এই ধরনের ঋণ শর্তাবলীর-সহ প্রযোজ্য, যা প্রাপক দেশগুলির পক্ষে বাস্তবায়ন করা প্রায় কঠিন। বহুপাক্ষিক সংস্থার কাছ থেকে ঋণ মকুব করার ক্রমবর্ধমান চাহিদা – যেমনটা না হলে – দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং অন্যান্য বহিরাগত ঋণদাতাদের কাছে তার ভাবমূর্তি নষ্ট করবে। এর ফলে অঞ্চল এবং তার বাইরে দেশের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের উপর প্রভাব পড়তে পারে।
আর্থিক সহায়তার প্রচেষ্টাগুলিকে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে দর্শানো হলেও বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির শিকড় অর্থনীতির অন্তর্নিহিত পরিকাঠামোয় নিহিত রয়েছে। দেশটির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে স্থায়ী কারেন্ট অ্যাকাউন্ট এবং রাজস্ব ঘাটতি, অর্থপ্রেরণে হ্রাস, উত্পাদন ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যকরণের অভাব, বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডারে ঘাটরি, মুদ্রাস্ফীতির উচ্চ হার, অন্তর্ভুক্তিমূলক নয় এমন উন্নয়নের ধারা, একটি আসন্ন জ্বালানি সঙ্কট ইত্যাদির মতো একাধিক ক্ষেত্রগুলি দেশটির ইতিবাচক অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গতিপথকে বিপদের মুখে ফেলেছে। (বাংলাদেশ সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানের জন্য পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য।)
এ কথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক দুর্দশা সম্পর্কে কোনও বিচ্ছিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করা সম্ভব নয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, কোভিড-১৯ শুধুমাত্র বাংলাদেশে নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয় অঞ্চলেই ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে, যার ফলে সমগ্র গ্লোবাল ভ্যালু চেন বা বৈশ্বিক মূল্য শৃঙ্খল (জিভিসি) ব্যাহত হয়েছে। শ্রীলঙ্কা চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে ভুগছে যেখানে জ্বালানি ও খাদ্যের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যের অভাব দেখা দিয়েছে; রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, তীব্র মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডারের হ্রাসের ফলে পাকিস্তান এক অনিশ্চিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সম্মুখীন; নেপাল ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে নগদ অর্থ প্রবাহের অভাব, বৈদেশিক অর্থ আমদানির ক্ষেত্রে স্থবিরতা এবং একটি বিস্তৃত বাণিজ্য ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছে; এবং ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সামরিক অভ্যুত্থানের পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক সঙ্কোচন হওয়ার কারণে মায়ানমার তীব্র বেকারত্বের সঙ্গে লড়াই করছে। বিশ্ব যখন অতিমারি-প্ররোচিত সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রভাবের সঙ্গে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল, তখন রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্বের ফলে সঙ্কট জটিলতর হয়ে ওঠে, যার দরুন তেল ও গ্যাসের দাম ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পায় এবং গ্লোবাল সাউথের তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা অনুভূত হয়।
এই গবেষণামূলক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কয়েকটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ খতিয়ে দেখা হয়েছে। এটিতে অশনি সঙ্কেতগুলিকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি সেই সকল বিষয়কেও তুলে ধরা হয়েছে, যা আগামী দশকগুলিতে বাংলাদেশের বৃদ্ধির আখ্যানকে সংজ্ঞায়িত করতে পারে।
১. রফতানিমুখী শিল্পায়নে ক্ষতি
বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা লাভের ৫০ বছর অতিক্রম করেছে। ১৯৭১-এর যুদ্ধের সময়ে এবং তার এক বছর আগে ১৯৭০ সালে গ্রেট সাইক্লোন বা বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় – যার ফলে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ নিহত হন(১১) – সেই সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম এক দরিদ্র দেশ হওয়া থেকে বর্তমানে দেশটি এক ‘এশিয়ান টাইগার’ বা ‘মুখ্য এশিয়ান শক্তি’ হয়ে উঠছে। দেশটি রেডিমেড পোশাক (আরএমজি) এবং ঔষধ নির্মাণ ক্ষেত্র-সহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক খাতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। বহু বছর ধরে কম বৃদ্ধির হার প্রত্যক্ষ করলেও – ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত গড় পরিমাণ ছিল ২ শতাংশ – এবং ২০০৪ সালে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে শিল্প ও পরিষেবাভিত্তিক হয়ে ওঠার মতো পরিকাঠামোগত রূপান্তরের পরে দেশটি ৫ পারসেন্ট মার্ক বা শতাংশ চিহ্নের মাত্রা অতিক্রম করেছে৷(১২) ২০১১ সাল থেকে দেশটির অর্থনীতি ধারাবাহিক ভাবে ৬ শতাংশের উপরে বৃদ্ধি পেয়েছে।(১৩)
চিত্র ৩ : বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার (বার্ষিক শতাংশ, ২০০০-২০২১)
১৯৭১ সালের আগে বাংলাদেশ একটি কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি ছিল। বছরের পর বছর ধরে জিডিপিতে কৃষিভিত্তিক খাতের অংশ হ্রাস পেয়েছে, ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে ৬০ শতাংশ থেকে ১৯৯০-এর দশকে তা ৩০ শতাংশে নামে আসে; সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই পরিমাণ প্রায় ১২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে জিডিপিতে শিল্প ও পরিষেবা খাতের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে : বর্তমানে জিডিপিতে শিল্প ও পরিষেবার পরিমাণে যথাক্রমে ৩৩ শতাংশ এবং ৫৫ শতাংশ।(১৫) বিশেষ করে পরিষেবা খাতে ১৯৮০-র দশকে ব্যাপক বৃদ্ধি লক্ষ করা যায়, যা ১৯৯০-এর দশকে বাণিজ্য উদারীকরণের পরে আরও বৃদ্ধি পায়। পরিষেবার প্রাথমিক উপখাতগুলির মধ্যে রয়েছে : পাইকারি ও খুচরো বাণিজ্য; পরিবহন, সঞ্চয় ও যোগাযোগ ব্যবস্থা; এবং আর্থিক মধ্যস্থতা।(১৬)
২০০০-২০১০ সালের মধ্যকার দশ বছরের তথ্য ব্যবহার করে নির্মিত একটি অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ দর্শায় যে, পরিষেবা ক্ষেত্রটি (৬.১৭ শতাংশ হারে) কৃষির তুলনায় (৩.২১ শতাংশ হারে) দ্রুততর বৃদ্ধি পেলেও শিল্পাঞ্চলে বৃদ্ধির হার (৭.৪৯ শতাংশ হার) পরিষেবার হারকে ছাপিয়ে গিয়েছ। ২০১০ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে জিডিপির শতাংশ হিসেবে ঊল্য সংযোজনকারী পরিষেবাগুলিও ২.২ শতাংশ বিন্দু বা পারসেন্টেজ পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে।(১৭)
চিত্র ৪ : বাংলাদেশের পরিষেবার মূল্য সংযোজন (জিডিপির শতাংশ, ১৯৮০-২০২১)
শিল্প ক্ষেত্রে উত্পাদনের অংশ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে, ১৯৯০-এর দশকে উচ্চ বৃদ্ধির হার পরিলক্ষিত হয়েছে এবং গত দুই দশক ধরে একটি ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা গিয়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রাথমিক ভাবে আরএমজিকেই কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে। উত্পাদন ক্ষেত্রে সামগ্রিক মূল্য সংযোজনের জন্য প্রায় ৫৭ শতাংশের জন্য দায়ী বয়নশিল্প এবং পোশাক।(১৯) অন্য দিকে মাঝারি এবং উচ্চ প্রযুক্তি উত্পাদন সংক্রান্ত মূল্য সংযোজন ১৯৯০-এর দশকের ২৪ শতাংশ থেকে ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে ২০১৯ সালে ৭ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।(২০)
চিত্র ৫ : বাংলাদেশের উৎপাদন মূল্য সংযোজন (জিডিপির শতাংশ, ১৯৯০-২০২১)
বর্তমান পরিস্থিতিতে আরএমজি ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ক্ষেত্রটি মূলত স্বল্প মূল্যে অতিরিক্ত শ্রমের সরবরাহের সুবিধা থেকে উদ্ভূত ব্যয়-তুলনামূলক সুবিধা এবং বৃহত্তর লাভের জন্য ক্ষেত্রটির সম্প্রসারণকে ব্যাহতকারী তা সরকারি প্রণোদনার সুবিধা ভোগ করত। ফাস্ট ফ্যাশন’(ঘ)-এর সাম্প্রতিক প্রবণতা বাংলাদেশের স্বল্প দক্ষ শ্রমিকদের বিশ্বব্যাপী ক্রেতাদের চাহিদা এবং পছন্দের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করেছে, যার ফলে এই শ্রেণিভুক্ত নিম্ন মূল্য শৃঙ্খলটিতে স্থিতিশীলতা লক্ষ করা যাচ্ছে।(২২) রফতানির বহুমুখীকরণ এবং বিভিন্ন খাতে পণ্যের মান উন্নয়নের জন্য যৌথ সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রকের অধীনে বেশ কয়েকটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলি উৎপাদনের জন্য কম সুদের হারে ব্যবসার মূলধন প্রদান করবে, বিদেশি প্রযুক্তিগত সহায়তা লাভের জন্য সমর্থন জোগাবে এবং দেশের রফতানি ক্ষেত্রটির বৈচিত্র্যকরণের দিকটিকে তুলে ধরার জন্য অন্যান্য পরিষেবা প্রদান করবে বলে আশা করা হচ্ছে।(২৩)
এটি অপরিহার্য, কারণ আরএমজি রফতানি দেশের মোট রফতানি উপার্জনের ৮৪ শতাংশ জুড়ে রয়েছে, যেটির ৭ শতাংশ বার্ষিক চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পেয়েছে অর্থাৎ ২০১১ সালে ১৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০১৯ সালে ৩৩.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পরিণত হয়েছে।(২৪) কৃষিজ কাঁচামাল আমদানি করার বদলে ঊৎপাদন করা শুরু হলেও রফতানি আরএমজি-র উপর নির্ভরশীল। এর পরিবর্তে, আরএমজি-র উপর নির্ভরশীল এই রফতানিমুখী শিল্পায়ন সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে ঝুঁকির সৃষ্টি করে। জিডিপি-তে রফতানির পরিমাণ শুধু মাত্র ২০১২ সালের ২০.২ শতাংশ থেকে ২০২১ সালে ১০.৭ শতাংশেই নেমেই আসেনি,(২৫) জটিল উত্পাদন পণ্যগুলির(ঙ) বৈচিত্র্যকরণ না করে একটি নির্দিষ্ট বিভাগের আরএমজি রফতানির উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা একাধিক ভাবে বৃদ্ধিকেই ব্যাহত করবে।
চিত্র ৬ : রফতানির প্রবণতা এবং মোট রফতানিতে আরএমজি-র ভাগ (১৯৮৩ – ২০১৮)
এ ক্ষেত্রে প্রথম উদ্বেগের বিষয়টি হল বাংলাদেশের তৈরি আরএমজি-র বৈশ্বিক চাহিদায় অস্থিতিশীলতা। মূল্য শৃঙ্খলের উচ্চতর বা অন্যান্য অংশে পর্যাপ্ত বৈচিত্র্যকরণের অভাবে স্বল্প মূল্যের পোশাক উৎপাদনে বাংলাদেশের মনোযোগ কোভিড-১৯ অতিমারির মতো বহিরাগত ধাক্কাগুলির মুখে বাংলাদেশের বৃদ্ধির ধরনটিকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। ২০১৯ সালের শেষের দিকে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রটিতে ইতিমধ্যেই মন্দার লক্ষণগুলি পরিলক্ষিত হলেও, ২০২০ সালের শুরুতে অতিমারির ফলে সমস্যাগুলি বৃহদাকার ধারণ করে, যার ফলে অর্ডার বাতিল হয় এবং অর্থ প্রদানে বিলম্ব লক্ষ করা যায়। আরএমজি দ্বারা সমর্থিত উত্পাদন ক্ষেত্রটি খাত বিশ্ব বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের অবস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারলেও, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উদ্ভুত রুশ-ইউক্রেন সংঘর্ষ আরএমজি-র চাহিদা হ্রাস পেয়েছে।(চ)(২৭)
দ্বিতীয় উদ্বেগের বিষয়টি হল, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় আরএমজি রফতানির উৎস হিসেবে ভিয়েতনামের উত্থান, যা বাংলাদেশের আরএমজি বাজারের প্রায় ৮০ শতাংশের সমান। ভিয়েতনাম এবং ইইউ-এর মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি বা প্রেফারেনশিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) ইইউতে বাংলাদেশের আরএমজি রফতানিকে ছাপিয়ে যেতে পারে এবং চিনের বিকল্প হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উপকরণ আমদানির জন্য ভিয়েতনামকে বেছে নিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনামের পোশাক আমদানির পরিমাণ বাংলাদেশের তুলনায় ২.৫ গুণ বেশি হবে বলে অনুমান করা হয়েছে।(২৮)
চিত্র ৭ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম থেকে পোশাক আমদানির মূল্য বৃদ্ধি (২০১১-২০২০)
তৃতীয়ত, আরএমজি-র সরবরাহের দিক থেকে ক্রমবর্ধমান জ্বালানির খরচ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রটিতে একটি অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে যেখানে পোশাক প্রস্তুতকারী সংস্থার উৎপাদন খরচের প্রায় ১০ শতাংশ শুধুমাত্র জ্বালানি খাতেই ব্যবহৃত হয়।(৩০) বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির চাপ আরএমজি-এর বিনিয়োগের খরচ আরও বাড়িয়েছে, যার ফলে তৈরি বা রেডিমেড পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বৈশ্বিক বাজারে তাদের মূল্য প্রতিযোগিতা হ্রাস পেয়েছে। আরএমজি ক্ষেত্রটিও মূলত সস্তায় স্বল্প দক্ষ শ্রমের উপর নির্ভরশীল, যা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রটিকে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা প্রদান করলেও ক্ষেত্র ও ভৌগোলিক পরিসরের মধ্যে শ্রমের গতিশীলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে তা স্থিতিশীল না-ও হতে পারে।
উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির গতি ও নমনীয়তার কারণে নিকটবর্তী অঞ্চলগুলির প্রাধান্য বৃদ্ধির সঙ্গে পরিকাঠামো প্রতিবন্ধকতা বাংলাদেশের আরএমজি ক্ষেত্রটির জন্য চতুর্থ উদ্বেগের কারণ। ২০১২ সালের তাজরিন ফ্যাক্টরি অগ্নিকাণ্ড এবং ২০১২ সালের রানা প্লাজা বিপর্যয় বাংলাদেশের বয়ন শিল্পে গুরুতর কাজের পরিস্থিতির বাস্তব অবস্থাকেই তুলে ধরে, যার ফলে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে।(৩১)
এ কথা উল্লেখ করা জরুরি যে, আরএমজি-বহির্ভূত ক্ষেত্রগুলি যে রফতানি বৈষম্যের সম্মুখীন হচ্ছে, তা রফতানি ক্ষেত্রগুলির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে সীমিত করার মাধ্যমে পণ্যের বৈচিত্র্যকরণও বাধাপ্রাপ্ত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবসায়িক পরিবেশের অবনতির কারণে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ঋণ লব্ধতার অসুবিধের কারণে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে দুর্বলতা দেখা যায় এবং আরএমজি পরিসরে রফতানি ক্ষেত্রের বহুমুখীকরণ এবং পরিকাঠামোগত উন্নতি দুইই বাধা পায়।(৩২) এর পাশপাশি ক্রমশ খারাপের পথে এগোনো জলবায়ু পরিবর্তনের মাঝে বৈশ্বিক চাহিদা আরও স্থিতিশীল পণ্যের দিকে ঝুঁকছে। বৈচিত্র্যকরণের অভাব এবং জলবায়ু নিরপেক্ষ পণ্যের দিকে ক্ষেত্র সম্প্রসারণের জন্য গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ হ্রাস করা দেশটিকে রফতানি হ্রাসের অতলে ঠেলে দিতে পারে, যার প্রভাব অন্যান্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরামিতিগুলির উপরেও পড়বে।
২. রাজস্ব ঘাটতি: কর প্রশাসন এবং মূলধন ব্যয়
বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বিশেষ করে ২০১৬ সাল থেকে সরকারি বাজেট ঘাটতিতে সামান্য বৃদ্ধির মুখ দেখেছ। সরকার সফল ভাবে ‘পাবলিক মানি অ্যান্ড বাজেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট ২০০৯’ অনুসারে ঘাটতির পরিমাণ জিডিপি-র ৫ শতাংশের আশপাশে রাখতে সমর্থ হলেও ২০১৯-২০ সালে প্রকৃত বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫.৫ শতাংশ, যা ২০১৬-২০১৭ সালে ছিল ৩.৪ শতাংশ।(৩৩) ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে সরকার ইতিমধ্যেই কোভিড-১৯ অতিমারির ফলে সৃষ্ট স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলায় জিডিপি-র প্রায় ৪.৪ শতাংশের পরিমাণ একটি উদ্দীপক প্যাকেজ হিসাবে ১.২৮ ট্রিলিয়ন টাকা প্রদান করেছে।(ছ) বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের মতোই এই ব্যয় রাজকোষের উপর বোঝা চাপিয়েছে।(৩৪)
সারণি ১ : বাংলাদেশে সামগ্রিক বাজেটের ভারসাম্য এবং অর্থায়ন (জিডিপি-র শতাংশ, ২০১৪-২০২১)
এ কথা সুনিশ্চিত ভাবে বলা যায়, ২০২০-২১ সালে সরকারের সামগ্রিক ব্যয় (জিডিপি-র ১৭.৪৬ শতাংশ) প্রাক-অতিমারি পর্বে কম (২০১৯ সালে ১৭.৮৭ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ১৮ শতাংশ) ছিল। তবে সঙ্কুচিত মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট), আমদানি, শুল্ক এবং সম্পূরক শুল্ক বাণিজ্য গতিশীলতা ও চাহিদা সঙ্কোচনের সীমাবদ্ধতার কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ (এনবিআর) উত্স থেকে কর রাজস্ব ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে আগের অর্থবর্ষের তুলনায় ২.৭৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তা সত্ত্বেও ২০১৯-২০২০ অর্থবর্ষে বাংলাদেশের রাজস্ব বণ্টনের পরিমাণ ৫.৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে যার নেপথ্যে ছিল ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের তুলনায় সংশ্লিষ্ট অর্থবর্ষে কর রাজস্বের ৬৩.৭৭ শতাংশ বৃদ্ধি।(৩৬)
মূলধারার অর্থনৈতিক তত্ত্ব এই পরামর্শই দিতে পারে যে, কম কর অর্থনীতিতে নিষ্পত্তিযোগ্য আয় এবং অর্থ সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে পারে, এর ফলস্বরূপ অর্থনৈতিক বৃদ্ধিও উত্সাহিত হয়। তবুও বাংলাদেশের জন্য অশনি সঙ্কেতগুলির মধ্যে অন্যতম হল, দেশটিতে সমগ্র অঞ্চলের মধ্যে সর্বনিম্ন কর-থেকে-জিডিপি অনুপাত লক্ষ করা যায়, যা মধ্য থেকে দীর্ঘমেয়াদে সময়ে রাজস্ব বণ্টনের লক্ষ্যগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সাতটি বিমস্টেক দেশের (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) মধ্যে বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন কর-থেকে-জিডিপি অনুপাত দেখা যায়, যা হল ৭ শতাংশ (২০২০) এবং তা মায়ানমারের ৬.৪ শতাংশের (২০১৯) চেয়ে বেশি। নেপালের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ হল ১৫.৮ শতাংশ (২০২০), তাইল্যান্ডে ১৪.৫ শতাংশ (২০২০), ভুটানে ১৮ শতাংশ (যেমনটা ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে অনুমান করা হয়েছে)(৩৭), ভারতে ১২ শতাংশ (২০১৮) এবং শ্রীলঙ্কায় ৮.১ শতাংশ (২০২০)।(৩৮) বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত গ্যাসপার ও অন্যান্য (২০১৬) দ্বারা প্রস্তাবিত ১৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা অনেকটাই নীচে।(৩৯)
সর্বোপরি, কর ফাঁকি-সহ অবৈধ আর্থিক প্রবাহ গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের জন্য একটি সঙ্কটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর আদায়ের সমস্যাগুলি ব্যাপক দুর্নীতি, কর কর্তৃপক্ষের রাজনীতিকরণ এবং এনবিআর-এ দক্ষ জনবলের অভাবকেই তুলে ধরে।(৪০)
চিত্র ৮ : বাংলাদেশে কর ফাঁকির অনুমান (জিডিপির শতাংশ, ১৯৮১-২০১৪)
বাংলাদেশের ব্যাপক পরিকাঠামোগত বিনিয়োগ এই সত্যটিকেই তুলে ধরে, যে কোনও অর্থনীতির বৈচিত্র্য, বৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিস্থাপকতা বিকাশের জন্য ভৌত পুঁজির গঠন অপরিহার্য। ২০২১ সালে ৬.৯৪ শতাংশের চিত্তাকর্ষক বৃদ্ধির হারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে(৪২) বাংলাদেশ অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে পরিকাঠামোগত বাধাগুলিকে দূর করার গুরুত্বকেও স্বীকার করে নেয়। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি জানিয়েছে, দেশটিকে পরিকাঠামোগত প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে।(৪৩) যদিও সরকারি ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ, উচ্চাভিলাষী ‘সারবত্তাহীন কর্মসূচি’(জ) এবং পরিকাঠামোর স্ফীত ব্যয় সরকারি ব্যয়ের উপর আরও বেশি বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে(৪৪), যা সামষ্টিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাকে খারাপতর করেছে। মাত্র পাঁচ বছরে, ২০১৬-১৭ থেকে ২০২০-২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে উন্নয়ন ব্যয় ৮৮০.৯০ বিলিয়ন টাকা (জিডিপি-র ৪.৪৬ শতাংশ) থেকে বেড়ে হয়েছে ২০৭৯.৮৮ বিলিয়ন টাকা (জিডিপি-র ৬.৭৪ শতাংশ)।(৪৫)
দেশের পরিকাঠামোগত প্রতিবন্ধকরতাগুলির অন্যতম উল্লেখযোগ্য অংশ হল পরিবহন এবং সংযোগ। পূর্ববর্তী উন্নয়ন সত্ত্বেও বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থা এখনও বিশ্বের সবচেয়ে নিম্নতম হিসাবে বিবেচিত হয়। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন সংযোগমূলক প্রকল্প শুরু করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু, ঢাকা মেট্রো রেল এবং ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। কিন্তু অধিকাংশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের সময়সীমা অতিক্রম করেছে।(৪৬) সেগুলির মধ্যে অধিকাংশের কাজই কোভিড-১৯-এর কারণে স্থগিত হয়েছে এবং অন্যান্য কর্মসূচি বিলম্বিত হয়েছে। কাঁচামালের বর্ধিত দাম, আমলাতান্ত্রিক নিষেধাজ্ঞা এবং জমি অধিগ্রহণের সমস্যাগুলির কারণে উক্ত কর্মসূচিগুলির খরচ প্রস্তাবিত মূল্য অতিক্রম করে গিয়েছে।(৪৭) বিদ্যুৎ এবং পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনগুলিতে ভর্তুকিও ২০১০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তীব্র হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অতি সম্প্রতি রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানির দাম বাড়ায় কাঁচামাল এবং খাদ্যের দামও বেড়েছে৷ এর ফলে সরকার দ্বারা অর্থায়িত পরিকাঠামোগত প্রকল্পগুলি স্থগিত হয়েছে। তা স্বাভাবিক ভাবেই খরচের মাত্রা বৃদ্ধি করেছে, উন্নয়নমূলক কর্মসূচির গতি শিথিল করেছে এবং রাজস্ব ঘাটতিতে অতিরিক্ত বৃদ্ধির সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশে মূলধন বৃদ্ধির গুরুত্বের নিরিখে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ জিডিপি-র শতাংশ হিসাবে গত দুই দশকে ৫ শতাংশ বিন্দু বা পারসেন্টেজ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেলেও(৪৮) মোট বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এর অংশ হ্রাস পেয়েছে এবং সরকারি খাতের ভাগ বেড়েছে।(৪৯) অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো ও নিম্ন মানের পরিবহন ব্যবস্থা, সম্পদের উপর কম আয় ও দুর্নীতির ফলে ব্যবসা করার জন্য উচ্চ বিনিময় খরচও বেসরকারি খাতের সামনে বাধার প্রাচীর হয়ে উঠেছে। প্রতিবন্ধকতাগুলি এতটাই জটিল হয়ে উঠেছে যে, ব্যাঙ্কিং খাত অকার্যকরী ঋণ এবং আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে পঙ্গু হয়ে গিয়েছে। ২০১৯ সালে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের মতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১১.১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আইএমএফ এই পরিসংখ্যানের বিরোধিতা করে এবং দাবি জানায় যে, আসলে বকেয়ার পরিমাণ এর প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে।(৫০)
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক দুর্বলতার পরিপ্রেক্ষিতে কল্যাণমূলক পদক্ষেপে অতিমারি-প্ররোচিত ব্যয়ের তীব্র বৃদ্ধি এবং সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে বাধা বাজেটের ঘাটতিকে গভীর করে তুলেছে এবং বাহ্যিক ঋণের উপর অর্থনীতির নির্ভরতা কেবলই বেড়ে চলেছে। স্বল্পমেয়াদে এই বাজেট সংক্রান্ত সমস্যাগুলি দূর করার জন্য দেশটিকে জরুরি ভাবে রাজস্ব বর্ধিতকরণ এবং গতিশীলতার পাশাপাশি ব্যয় যৌক্তিকীকরণের জন্য কার্যকর পদ্ধতির উপর মনোনিবেশ করতে হবে।
৩. অর্থ প্রদানের সমতা : বাণিজ্যিক ভারসাম্য এবং প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ
বাংলাদেশের রফতানি খাত প্রায়শই তার অসাধারণ বৃদ্ধির জন্য প্রশংসিত হয়, যার মূল্য ২০২১-২২ অর্থবর্ষে সর্বকালের সর্বোচ্চ ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছিল। বুনন পোশাকের রফতানি বছর প্রতি ৩৬.৮৮ শতাংশ বেড়ে ২৩.২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে এবং বয়ন পোশাক রফতানি একই অর্থবর্ষে ৩৩.৮২ শতাংশ বেড়ে ১৯.৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।(৫১) ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে রাসায়নিক পণ্য, কৃষি পণ্য এবং হিমায়িত ও জীবন্ত মাছের রফতানি আয় যথাক্রমে ৩০ শতাংশ, ১৪ শতাংশ এবং ৭.২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।(৫২) আমদানি-রফতানি অসামঞ্জস্য বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য অতিরিক্ত সমস্যার সৃষ্টি করে এবং সেই কারণে অর্থ প্রদানের ভারসাম্যও (বিওপি) বিঘ্নিত হয়।(ঝ) ২০২১ সালের শেষ ত্রৈমাসিক এবং ২০২২ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকের মধ্যে আমদানির পরিমাণ প্রায় ৩২৭.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বেড়েছে, যা ১.৬ শতাংশ বৃদ্ধিকেই নির্দেশ করে।(৫৩) ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বাণিজ্য ভারসাম্য (-) ৯.২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (জিডিপি-র ৩.৪৯ শতাংশ) থেকে (-) ২৬.৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে (জিডিপি-র ৬.৪০ শতাংশ) নেমে এসেছে।(৫৪)
চিত্র ৯ : বাংলাদেশে বাণিজ্যের ভারসাম্য (বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং জিডিপি-র শতাংশে, ২০১০-২১)
দক্ষিণ কোরিয়া, চিন এবং বেশ কিছু দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অর্থনীতির মতো পোশাক রফতানির ইতিহাস রয়েছে এমন অন্যান্য দেশের বিপরীতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ আরও জটিল পণ্যের দিকে সরে যেতে পারেনি। দেশটি স্বল্প মূল্য যুক্ত উৎপাদিত পণ্য রফতানি করে চলেছে এবং ২০০০ সাল থেকে রফতানি ঝুড়িতে কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনই আসেনি।(৫৬) ২০২২ অর্থবর্ষে বাংলাদেশের চলতি হিসাবের ঘাটতি ৩০৮ শতাংশ বেড়ে (-) ৪.৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে (-) ১৮.৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এটিকে বৈশ্বিক বাজারে ওঠা-নামার কারণে একটি স্বল্পমেয়াদী ধাক্কা হিসাবে বিবেচনা করা হলেও(৫৭) বৈচিত্র্যহীন রফতানি ও প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি সংক্রান্ত বাণিজ্যিক ঝুড়ি গঠনের অন্তর্নিহিত সমস্যা এবং আসন্ন ঝুঁকিগুলি দেশের সামগ্রিক বিওপি পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করবে।
চিত্র ১০ : বাংলাদেশে অর্থ প্রদানের ভারসাম্য (বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, ২০১৫–২০২২)
‘টুইন ডেফিসিট’ হাইপোথিসিস বা ‘জোড়া ঘাটতি’ তত্ত্ব
শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশও ‘টুইন ডেফিসিট’ তত্ত্বের এক প্রকৃষ্টতম উদাহরণ: অর্থাৎ, অর্থনীতির রাজস্ব ভারসাম্য এবং চলতি হিসাবের ভারসাম্যের মধ্যে একটি শক্তিশালী কার্যকারণমূলক যোগসূত্র রয়েছে। ২০২১ সালে একটি পরীক্ষামূলক তদন্ত রাজকোষ ঘাটতি থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক ঘাটতি পর্যন্ত একমুখী কার্যকারণ খুঁজে পায় এবং সেটিই আসলে দীর্ঘমেয়াদে চলতি হিসাবের ঘাটতির কারণ।(৫৯) অতএব একটি স্থিতিশীল চলতি অ্যাকাউন্ট ঘাটতি বজায় রাখার জন্য একটি পরিচালনাযোগ্য বাজেট ঘাটতিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ঘটনা সাধারণত উচ্চ মাত্রার অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি ঋণ-সহ ভোগ দ্বারা চালিত অর্থনীতির বিকাশের জন্য সত্যি। দেশটি তীব্র চাহিদার মাত্রার সঙ্গে সংযুক্ত। সাধারণত ভোক্তাদের চাহিদার জোগান দিতে আমদানি বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা এবং মুদ্রাস্ফীতির জোরদার হওয়া ঘটনা ঘটে থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছে। এ ভাবে অভ্যন্তরীণ ভাবে উৎপাদিত পণ্যগুলিকে প্রায়শই বিশ্ব রফতানি বাজারে কম প্রতিযোগিতামূলক বলে মনে করা হয়।
রাজস্ব ও চলতি হিসাবের জোড়া ঘাটতির মূলত দু’টি কারণ রয়েছে।(৬০) প্রথমত, কেনেসিয়ান পদ্ধতি অনুসরণ করে ক্রমবর্ধমান বাজেটের ঘাটতি দেশীয় শোষণকেই ত্বরান্বিত করে, যার ফলে সৃষ্ট আমদানির বৃদ্ধি চলতি হিসাবের ঘাটতিকেও বাড়িয়ে তোলে এবং উল্টোটাও ঘটতে পারে। দ্বিতীয়ত, মুন্ডেল-ফ্লেমিং মডেল(ঞ) দর্শায় যে, বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধির ফলে সুদের হার ঊর্ধ্বমুখী হয় এবং তার বিপরীত অবস্থাটিও সত্য। সুদের হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় অর্থনীতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আরও আকর্ষক হয়ে ওঠে, যার ফলে মূলধন অ্যাকাউন্টে উদ্বৃত্ত বেড়ে যায় এবং চলতি হিসাবের ঘাটতি বৃদ্ধি পায়। ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্টের উদ্বৃত্ত বর্তমান অ্যাকাউন্টে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, যেখানে বর্ধিত নগদ টাকার পরিমাণ ভোগের চাহিদা বাড়ায়, যা বর্ধিত আমদানির প্রয়োজনীয়তাকেই তুলে ধরে। ফলে চলতি হিসাবের ঘাটতি দেখা যায়।(৬১) বিকল্প ভাবে মূলধন প্রবাহ অভ্যন্তরীণ মুদ্রার মান উন্নত করতে পারে যা আমদানিকে অনেকাংশেই সস্তা করে তোলে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা তৈরি করে ও ফলে রফতানি ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। এই প্রবাহটি তাদের মূল্য হ্রাসের দিকে নিয়ে যাবে, যার ফলে আবার চলতি হিসাবের ঘাটতি প্রসারিত হবে। যদিও সাম্প্রতিক অতীতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা হয়নি। কারণ গত বছর বাংলাদেশি টাকা ক্রমাগত তার মূল্য হারিয়েছে।
বিওপি-র মূলধন অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) মূলধন অ্যাকাউন্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা বাংলাদেশের সামগ্রিক বিওপি ঘাটতি কমাতে সাহায্য করে। স্বল্পমেয়াদি ধাক্কাকে সামাল দেওয়ার জন্য দেশের ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এফডিআই অপরিহার্য। এটি প্রযুক্তির ঘাটতিগুলি কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে এবং গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগের মাধ্যমে উদ্ভাবনে সহায়তা করে। এ ভাবে অর্থনীতিতে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের ব্যবধান হ্রাস পায়। যদিও বাংলাদেশে জিডিপি-র শতাংশ হিসাবে এফডিআই-এর নেট প্রবাহ ক্রমাগত ২০১৩ সালের ১.৭ শতাংশের সর্বোচ্চ হার থেকে কমে গিয়ে ২০২০ সালে ০.৪ শতাংশেরও কমে এসে দাঁড়িয়েছে।(৬৩) মার্কিন ডলার থেকে মূলধন অ্যাকাউন্টের ভারসাম্য হ্রাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ২০১৩ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৭২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।(৬৪) ওই একই সময়ে প্রধানত কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে ২০২১ সালে অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিগত বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়ে।(৬৫)
অন্য দিকে, বাংলাদেশে এফডিআই নীতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অনেক ছাড় দিয়েছে এবং এফডিআই আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন রফতানি উন্নয়ন অঞ্চল ও অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হয়েছে। বিগত চার বছরে বাংলাদেশ ব্যবসা শুরু, ঋণের সহজলভ্যতা এবং বিদ্যুতের লব্ধতার ক্ষেত্রে এফডিআই বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নানা পরিকাঠামোমূল প্রকল্পের সূচনা হলেও সেগুলি এফডিআই প্রবাহকে বাস্তবায়িত করতে পারেনি এবং আরএমজি বা অন্যান্য খাতে কোনও বড় বহুজাতিক সংস্থার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ দ্বারা গৃহীত নেট এফডিআই প্রবাহের পরিমাণ ছিল ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা দেশের জিডিপি-র ০.৫৩ শতাংশ এবং – এশিয়ার মধ্যে নিম্নতম দেশগুলির একটি।(৬৬) উপরোল্লিখিত পদক্ষেপগুলি সত্ত্বেও ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট, ২০২০-তে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নিজের পূর্ব অবস্থান থেকে আট ধাও নেমে ১৬৮তম স্থানে এসে পৌঁছেছে। বিদ্যুতের সংযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধার পাশাপাশি একটি সমস্যা নিরসন এবং সম্পত্তির অধিকার হস্তান্তর প্রক্রিয়ার দরুন দেশটিতে নতুন ব্যবসা শুরু করা অত্যন্ত কঠিন কাজ।(৬৭)
সারণি ২ : বাংলাদেশের শীর্ষ পাঁচটি উৎস এবং এফডিআই-এর গন্তব্য (২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত, মিলিয়ন মার্কিন ডলারে)
২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে আর্থিক নীতি পর্যালোচনা ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ৭.২ শতাংশের প্রকৃত জিডিপি বৃদ্ধির হারের পূর্বাভাস দিয়েছে।(৬৯) যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে লক্ষ্যমাত্রা নাগালের বাইরে বলে মনে হচ্ছে : ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, অভ্যন্তরীণ মুদ্রার ভাণ্ডার এবং মূল্য হ্রাস, সরকারের কর এবং করহীন রাজস্ব সংগ্রহে ঘাটতি, বাণিজ্য ভারসাম্য বৃদ্ধি এবং এফডিআই-এর পতন। রাজস্ব একত্রীকরণ থেকে বিচ্যুতি সার্বভৌমের নিম্নগামী রেটিং-এর অতিরিক্ত ঝুঁকি বহন করে, যা অর্থনীতি থেকে মূলধনের বহির্প্রবাহকেও প্ররোচিত করতে পারে এবং যার ফলে বিওপি পরিস্থিতি খারাপতর হয়ে উঠতে পারে। সরকার প্রতিক্রিয়া হিসাবে কিছু কঠোরতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অর্থ মন্ত্রক ‘সি’ ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলির জন্য তহবিল প্রকাশ স্থগিত রেখেছে।(৭০) বাংলাদেশে জননীতি সংক্রান্ত আলোচনা বর্তমানে স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপের উপর মনোনিবেশ করলেও দীর্ঘমেয়াদে স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের জন্য বিওপি এবং সরকারি বাজেটে কাঠামোগত পরিবর্তন আনার উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারকগুলির প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।
৪. অর্থ প্রেরণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি এবং টাকার অস্থিতিশীলতা
উন্নয়নশীল বিশ্বে অর্থ প্রেরণ ব্যবস্থার সুবিধাগুলিকে অস্বীকার করা যায় না: স্থানীয় স্তরে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা, আর্থিক নীতির বিকাশকে লালনপালন করা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্তরে আর্থিক বাজারকে উদ্দীপিত করা। ইকোনোমেট্রিক বা অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ দেখায় যে, শ্রমিকের জন্য অর্থ প্রেরণ ব্যবস্থা হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং পরিসংখ্যানগত ভাবে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনশীল যা ব্যবহার এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশগুলির অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে ইতিবাচক অবদান রাখে।(৭১) বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থ প্রেরণের ক্ষেত্রে গ্রাহক দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম, যার ১ কোটিরও বেশি পরিযায়ী শ্রমিক বিভিন্ন দেশে, প্রধানত পশ্চিম এশিয়ায়, ছড়িয়ে রয়েছেন এবং যাঁরা জিডিপি-র প্রায় ৭ শতাংশ অবদান রাখে।(৭২)
২০২০ সালের গোড়ার দিকে কোভিড-১৯ অতিমারি দেশটির প্রাপ্ত প্রেরিত অর্থের উপর বিপর্যয়কর আঘাত হানে যখন কঠোর লকডাউন ব্যবস্থা আরোপ করার ফলে বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক বিভিন্ন দেশে আটকে পড়েন। কাজ হারানো, এবং তার ফলে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজের দেশে প্রত্যাবর্তনের ফলে ২০২১-২২ অর্থবর্ষে প্রায় ১৫.১২ শতাংশ অর্থাৎ ২১.০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ প্রেরণে হ্রাস ঘটে।(৭৩)
চিত্র ১১ : বাংলাদেশে অর্থ প্রেরণ (বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, ২০১৪–২০২২)
ঐতিহাসিক ভাবে বাংলাদেশে চলতি হিসাবের ঘাটতি অর্থ প্রেরণের মাধ্যমে পূরণ করা হয়। যদিও এ ক্ষেত্রের দুঃখজনক অবস্থা শুধু মাত্র বিওপি-র অবনতির কারণেই হয়নি, বরং বৈদেশিক মুদ্রার (ফরেক্স) ভাণ্ডারও হ্রাস পেয়েছে, যা মার্কিন ডলারের তুলনায় বাংলাদেশি টাকাকে দুর্বলতর করে তুলেছে। ২০২২ সালের ১৬ মে বাংলাদেশি টাকা এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র এক দিনের পতন রেকর্ড করে (০.৯১ শতাংশ ক্ষতি), যখন এটি মার্কিন ডলারের তুলনায় প্রায় ৮৭.৫০ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছিল এবং যা ঠিক এক বছর আগের একই দিনে প্রতি মার্কিন ডলারের হিসেবে ৮৪.৪০ টাকা ছিল।(ট)(৭৫)
মার্কিন ডলারের তুলনায় বাংলাদেশি টাকার দুর্বলতা এক দিকে আমদানির মূল্য বাড়ায়, অন্য দিকে আমদানিকৃত পণ্য এবং অন্যান্য প্রতিস্থাপনযোগ্য আমদানি না করা অভ্যন্তরীণ পণ্যের দেশীয় মূল্যের বৃদ্ধি ঘটায়।(৭৬) বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে সরকারের নিরুৎসাহ বাণিজ্য ভারসাম্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অন্য দিকে দেশীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির পরিস্থিতিকে খারাপতর করে তুলবে। দেশীয় মুদ্রাকে স্থিতিশীল করার জন্য সরকার বিনিময় হার সমন্বয় করার চেষ্টা চালিয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক তার বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডারে তীব্র পতন হয়েছে, যা ২০২১ সালের ৪৬.৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২২ সালের জুলাই মাসে ৩৯.৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে।(৭৭) এটি মূলধনের উপর লাভ হ্রাসের কারণে দেশে মূলধন বিনিয়োগের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে এবং এ ভাবে দেশের দীর্ঘমেয়াদি বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে হ্রাস করেছে। এর পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডারের ক্ষয় করেছে, যার ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ক্রমবর্ধমান অপরিশোধিত তেলের দাম, অন্যান্য সরবরাহে বাধা এবং ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার মতও উন্নত দেশগুলিতে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি বাংলাদেশের জন্য বহিরাগত ক্ষেত্রের দৃষ্টিভঙ্গির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
চিত্র ১২ : বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডার (বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, ২০১৪–২০২২)
জ্বালানির মতো অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলেছে। তবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীই ক্রমবর্ধমান দামের ধাক্কা বহন করছে এবং দেশের নীতিনির্ধারকদের সামনে তা গুরুতর প্রশ্ন তুলে ধরেছে। সরকার কিছু উন্নয়ন প্রকল্প বিলম্বিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের মতো অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাসকে উৎসাহিত করছে। ২০২২ সালের অগস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ কখনই শ্রীলঙ্কা হয়ে উঠবে না। যে কোনও উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার আগে আমরা বাস্তব দিকটি বিবেচনা করে দেখি, (এবং সে কারণেই) দেশ সমস্ত বৈশ্বিক প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে থাকবে।’(৮০)
৫. জ্বালানি ক্ষেত্র এবং মুদ্রাস্ফীতির সমস্যা
বাংলাদেশ গত দুই দশকে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্থিতিশীল অগ্রগতি লাভ করেছে, যার একটি বড় অংশের নেপথ্যে রয়েছে গ্রামীণ অঞ্চলে বিদ্যুতায়ন ব্যবস্থা। গ্যাস বিদ্যুৎ উৎপাদনের সিংহভাগ জন্য দায়ী হলেও বাংলাদেশ সৌর পিভি, বায়ু এবং জলবিদ্যুতের মতো পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উত্সগুলিতে রূপান্তর করার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট গতি অর্জন করেছে। ২০০০ সালে ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২০ সালে দেশের জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে।(৮১) শুধু মাত্র ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যেই গ্রামীণ এলাকায় ৭৩ লক্ষ মানুষ দূষণমুক্ত এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির সুবিধা লাভ করেছেন। গ্রামীণ অঞ্চলে বিদ্যুতায়নের সুবিধাভোগীদের মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী(৮২) যা বাংলাদেশকে স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ৫ (লিঙ্গ সমতা) এবং এসডিজি ৭-এর (সাশ্রয়ী ও দূষণমুক্ত শক্তি) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।
চিত্র ১৩ : বাংলাদেশে মোট শক্তি সরবরাহ (টিইএস) (উৎস থেকে, ১৯৯০-২০১৯)
বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০০৯ সালে ৫ গিগাওয়াট (জিডব্লিউ) থেকে ৮০ শতাংশ বেড়ে ২০২২ সালে ২৫.৫ জিডব্লিউ হয়েছে(৮৪), প্ল্যান্ট লোড ফ্যাক্টর (পিএলএফ) বা উৎপাদিত বিদ্যুৎ এবং সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ক্ষমতার মধ্যে অনুপাত জ্বালানি ও গ্যাসের সাম্প্রতিক ঘাটতির কারণে সর্বকালীন তলানিতে এসে ঠেকেছে : ২০২২ সালের প্রথমার্ধে কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য তার পরিমাণ ছিল ০.৮ শতাংশেরও কম। সরকার ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অস্থায়ী কেন্দ্র হিসাবে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট (কিউআরপিপি) চালু করেছিল এবং এই উৎপাদনকেন্দ্রগুলি গত এক দশকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য রকম অবদান রেখেছে। বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডারের সাম্প্রতিক দুর্বল অবস্থা এবং বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানির ক্রমবর্ধমান মূল্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জ্বালানি আমদানি করার ক্ষেত্রে দেশের সক্ষমতাকে বাধা দিয়েছে, যার ফলে বিপুল সংখ্যক কিউআরপিপি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।
যদিও কিউআরপিপি এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসরসদের (আইপিপি) সঙ্গে চুক্তিতে এমন কিছু বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেগুলির জন্য বিদ্যুৎ উৎপন্ন না হওয়া সত্ত্বেও তাদের উৎপাদনক্ষমতার মূল্য চোকাতে রতে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত সরবরাহ সংক্রান্ত সমস্যা বাড়িয়ে দিয়েছে এবং ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে বিশ্ব বাজারে পেট্রোলিয়ামের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ মার্কিন ডলারের সর্বোচ্চ হারে পৌঁছনোর ফলে(৮৬), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ঘাটতির কারণে নিষ্ক্রিয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে এবং উৎপাদন মূল্য প্রদানের দরুণ দৈনিক ১৯০ মিলিয়ন টাকার ক্ষতির কথা জানিয়েছে।(৮৭) এটি একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে পরিকাঠামো নির্মাণ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য স্থিতিশীল রূপান্তরকে নিরুৎসাহিত করেছে, যার ফলে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্টাল বোর্ড (বিপিডিবি) ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং একই সঙ্গে ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বিপিডিবি-তে সরকারি ভর্তুকি ৫৮.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশের বহু বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাসভিত্তিকই, যেগুলো বাংলাদেশের তেল, গ্যাস ও খনিজ কর্পোরেশন, পেট্রোবাংলার সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে। পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা প্রায়শই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের অনুপলব্ধতার বিষয়ে সতর্ক করেছেন।(৮৯) গ্যাস অনুসন্ধানে অপর্যাপ্ত পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের কারণে বাংলাদেশে বর্তমান গ্যাসের মজুত সীমিত এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) জন্য তহবিলের অভাব এই প্রতিবন্ধকতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, মায়ানমার এবং ভারত থেকে অফশোর অঞ্চলগুলিকে সুরক্ষিত করার পরেও দেশটি অফশোর গ্যাস অনুসন্ধানে কোনও সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। সরকার কয়েক বছর আগে জাপানের সঙ্গে সহযোগিতায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিলেও তা থেকে সম্ভাব্য কার্বন নিঃসরণ সংক্রান্ত সমালোচনার মুখে দাঁড়িয়ে ২০২১ এবং ২০২২ সালে জাপান কর্তৃক প্রকল্প বাতিল এবং তহবিল প্রত্যাহার করা হয়।(৯০) গ্যাসের বাজারে এই চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এনএলজি) আমদানির উপর নির্ভরতা বাড়িয়েছে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের প্রায় ৫৫ শতাংশ মার্কিন সংস্থাগুলি দ্বারা সরবরাহ করা হয়।(৯১) বাংলাদেশ যথাক্রমে ১৫ এবং ১০ বছরের জন্য এলএনজি সরবরাহের উদ্দেশ্যে ২০১৭ সালে কাতার এবং ২০১৮ সালে ওমানের সাথে দু’টি ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।(৯২)
আমদানির উপর অত্যধিক নির্ভরশীলতা এবং দ্রুত পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি উৎসে স্থানান্তরের অক্ষমতার কারণে বাংলাদেশের জ্বালানি সমস্যা আরও বেড়েছে। ইউক্রেন সঙ্কট সমস্যাগুলিকে আরও গুরুতর করে তুলেছে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমানোর চেষ্টা করার পরিবর্তে সরবরাহ সংক্রান্ত সমস্যাগুলির সমাধান করার জন্য দেশটিকে অবশ্যই উপায় খুঁজে বের করতে হবে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা হ্রাসের বিষয়টি শুধুমাত্র বাংলাদেশের মতো দ্রুত নগরায়নকারী দেশের জীবনযাত্রার মানকেই প্রভাবিত করবে না, বরং তা পরিকাঠামোগত ক্ষমতার অবনতির দিকে নিয়ে যাবে ও দেশের দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে বাধা দেবে। পর্যাপ্ত প্রশাসনিক পদক্ষেপ এবং স্বচ্ছতা অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের ঘটনাগুলির সংখ্যা হ্রাসে সাহায্য করবে। কারণ গ্যাস ক্ষেত্রের কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতি প্রায়শই বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।(৯৩) যদিও সরকার এ কথা বুঝতে পেরেছে যে, দেশে অব্যবহৃত গ্যাসের ভাণ্ডার থাকতে পারে(৯৪)। তাই সরকারকে আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মাধ্যমে গ্যাস অনুসন্ধানকে ত্বরান্বিত করতে হবে, এবং একই সঙ্গে অব্যবহিত শক্তি নিরাপত্তা সমস্যাগুলি প্রশমিত করার জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পুনর্নবীকরণযোগ্য এবং অপুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উত্সগুলিকে ব্যবহার করতে হবে।
ক্রমবর্ধমান জ্বালানির মূল্য এবং ভর্তুকির টানাপড়েনের মাঝে সরকার বর্তমানে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। অগস্ট মাসে ডিজেলের অভ্যন্তরীণ দাম ৪২.৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করা হয়; কেরোসিনের ক্ষেত্রেও একই শতাংশ হারে একই রকমের মূল্য বৃদ্ধি লক্ষ করা গিয়েছে; অকটেনের মূল্য ৫১.৬ শতাংশ বেড়ে ১৩৫ টাকা হয়েছে; এবং পেট্রোল ৫১.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৩০ টাকা।(৯৫) এই মূল্যবৃদ্ধি বিগত ২০ বছরের মধ্যে প্রায় সর্বোচ্চ এবং এর ফলে বাংলাদেশের জ্বালানির মূল্য চিন, ভারত এবং নেপালের মতো অন্যান্য এশিয় দেশগুলির সঙ্গে সমান হয়েছে। এই চড়া বৃদ্ধির নেপথ্যে কয়েকটি কারণ রয়েছে।(৯৬)
প্রথমত, গত দু’বছরে যখন আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারগুলি অস্থিতিশীল ছিল, তখন ভারতের মতো দেশগুলির বিপরীতে হেঁটে বাংলাদেশ তার অভ্যন্তরীণ জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করেনি। অভ্যন্তরীণ জ্বালানির দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ভারত যখন দেশব্যাপী প্রতিবাদের মুখোমুখি হয়েছিল, বাংলাদেশকে দাম স্থিতিশীল রাখার ভর্তুকির উপর নির্ভর করতে হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, অভ্যন্তরীণ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইএমএফ ঋণের অনুরোধের সময় একটি আসন্ন অর্থনৈতিক সঙ্কট বিষয়টির উদ্বেগকে উস্কে দিয়েছে এবং জ্বালানি ভর্তুকি সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার জন্য আইএমএফ-এর সঙ্গে আরও দর কষাকষি করার ক্ষমতা বাংলাদেশকে সাহায্য করতে পারে। অবশেষে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায়, বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের পর, আমদানির ক্ষেত্রে বাধা, ক্রমবর্ধমান ভর্তুকি এবং বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডারে চরম সঙ্কটের কারণে দেশীয় জ্বালানির দাম বাড়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।
জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি অভ্যন্তরীণ খরচের উপর শক্তিশালী প্রভাব ফেলতে বাধ্য এবং সেই কারণে একগুচ্ছ আমদানিকৃত এবং দেশীয় পণ্যের উপরেও এর প্রভাব পড়বে। এই মূল্যবৃদ্ধি জনিত মুদ্রাস্ফীতি বাংলাদেশি টাকার আরও অবমূল্যায়নের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের দরিদ্র এবং দুর্বলতম অংশগুলির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে৷ বেশিরভাগ মুদ্রাস্ফীতি পরিবহন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পোশাক এবং জুতোর ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পেলেও, ২০২২ সালের জুন মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে ৮.৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সার ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে পরিবহন ও যান্ত্রিকীকরণের খরচ আরও বেড়েছে এবং এর ফলে কৃষি পণ্যের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার ২০২২ সালের জুন মাসে ৭.৫৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল প্রায় ৫.৩৬ শতাংশ এবং তা নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতির হার বলে বিবেচিত হয়েছে।(৯৮) প্রকৃত পক্ষে বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতির হার ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ধারাবাহিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও এই মুদ্রাস্ফীতিকে আংশিক ভাবে কোভিড-১৯ অতিমারি দ্বারা সৃষ্ট বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারের ব্যাঘাত এবং অতিমারি মহামারী স্থিতিশীল হওয়ার পরে চাহিদার ভাঁড়ারকে মূল্যস্ফীতির জন্য দায়ী করা যেতে পারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতিতেও ভাল প্রভাব ফেলেনি, বিশেষ করে খাদ্য ও জ্বালানির মতো প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে।
চিত্র ১৪ : বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির হার (২০২১-২০২২)
বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর করা পূর্ববর্তী গবেষণা এ কথাই তুলে ধরে যে, সরকারি ব্যয় সরকারি রাজস্বের চেয়ে মুদ্রাস্ফীতির চাপের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে আরও দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে সাযুজ্য বজায় রাখায় দেশের রাজস্ব ঘাটতিকে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।(১০০) আবার ‘টুইন ডেফিসিট হাইপোথিসিস’ বা ‘জোড়া ঘাটতি তত্ত্ব’ অনুসারে, রাজস্ব ঘাটতির বাণিজ্য ভারসাম্যের উপর শক্তিশালী ইতিবাচক কার্যকারণ বিদ্যমান এবং তাই চলতি হিসাবের ঘাটতি এবং বিওপি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটি বৈদেশিক মুদ্রাকে আরও অবক্ষয়ের দিকে চালিত করে। এ ভাবে দেশীয় অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির চাপ অনুভূত হয়। এই স্বাবলম্বী, সামষ্টিক অর্থনৈতিক শক্তির বিকৃত চক্র উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য আরও শক্তিশালী হলেও অতিমারি মহামারী বা দীর্ঘমেয়াদি ইউক্রেন সঙ্কটের মতো সুবিশাল বহিরাগত ধাক্কার সম্মুখীন হলে বাংলাদেশের দেশীয় অর্থনীতিতে শক্তিশালী পরিকাঠামোগত পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে।
৬. উন্নয়নমূলক গতিপথ এবং বৃদ্ধির প্রভাব
আয়ুষ্কাল, বিদ্যালয়ে পঠনপাঠনের প্রত্যাশিত সময়কাল, বিদ্যালয়ে পড়ার গড় বার্ষিক হিসেব এবং মাথাপিছু মোট জাতীয় আয়ের (জিএনআই) মতো সূচকগুলিতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দরুন বাংলাদেশের মানব উন্নয়ন সূচক (এইচডিআই) স্কোর ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সূচকে বাংলাদেশ ১৮৯টি দেশের মধ্যে ১৩৩তম স্থানে রয়েছে (১-এর মধ্যে ০.৬৫৫ স্কোর-সহ), যখন ২০২২ সালের এইচডিআই রিপোর্টে দেশটি ১৯১টি দেশের মধ্যে ১২৯তম (০.৬৬১ হারে) পদে উন্নীত হয়েছে। এটি ভারত (১৩২তম), নেপাল (১৪৩তম), পাকিস্তান (১৬১তম) এবং আফগানিস্তনের (১৮০তম) এর মতো নিকটবর্তী প্রতিবেশী দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।(১০১)
চিত্র ১৫ : বাংলাদেশে এইচডিআই প্রবণতা (১৯৯০-২০২১)
বাংলাদেশ বর্তমানে জাতিসংঘ কর্তৃক সংজ্ঞায়িত ‘মাঝারি মানব উন্নয়ন’ শ্রেণিতে রয়েছে। উপার্জন বৈষম্যের সমস্যা, যা ঐতিহাসিক ভাবে দেশটিকে জর্জরিত করেছে, বছরের পর বছর ধরে দারিদ্র্যের মাত্রা হ্রাস সত্ত্বেও ব্যাপক আকার ধারণ করছে৷ দেশের জিনি গুণাঙ্ক(ঠ) ২০১০ সালে ০.৪৫৬ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৬ সালে ০.৪৮২ হয়েছে।(১০৩)
১৯৯৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার নীচের ৫০ শতাংশের কর-পূর্ব জাতীয় আয়ের শতাংশ ভাগ ১৬.২৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৭.০৮ শতাংশ হয়েছে, যেখানে শীর্ষ ১০ শতাংশের জন্য সেই পরিমাণ ৪৪.৮৮ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৪২.৪০ শতাংশে। একই সময়ে প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার নীচের ৫০ শতাংশের মোট ব্যক্তিগত সম্পদের শতাংশের ভাগ মাত্র ৪.৬৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪.৭৭ শতাংশ হয়েছে এবং প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার শীর্ষ ১০ শতাংশের জন্য এই পরিমাণ ৫৯.২ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়েছে হয়েছে ৫৮.৭ শতাংশ।
চিত্র ১৬ : বাংলাদেশে আয় ও সম্পদের বৈষম্য (১৯৯৫-২০২১)
বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রকৃত পক্ষে গত দশকে মোট সঞ্চয় হ্রাসের প্রবণতা দ্বারা চিহ্নিত – ২০২১ সালে মোট জাতীয় উপার্জনের (জিএনআই) ৩৫.৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২০ সালে ৩৩.৯ শতাংশ হয়েছে।(১০৬) এর দু’টি প্রভাব বিদ্যমান। প্রথমত, যেহেতু সঞ্চয় বিনিয়োগে প্ররোচনা দেয়, করে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য, পূর্বের সম্পদ সৃষ্টি, উৎপাদন এবং কর্মসংস্থানে একটি ক্ষয়িষ্ণু প্রবণতা অর্থনীতিতে একটি স্থিতিশীল বৃদ্ধির বিন্যাসেরও অবনতি ঘটায়।(১০৭) দ্বিতীয়ত, যদি গৃহস্থালির সঞ্চয়গুলি পরিকাঠামো নির্মাণে পর্যাপ্ত ভাবে না হয়, বিশেষ করে সরকারি পরিকাঠামো প্রকল্পের মাধ্যমে, তা হলে তা অস্থিতিশীল পরিকাঠামোগত ব্যয় দ্বারা প্ররোচিত হয়ে আর্থিক বোঝা বাড়িয়ে তোলে, যার ফল বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যেই ভুগছে।
চিত্র ১৭ : বাংলাদেশের মোট সঞ্চয় (জিএনআই-এর শতাংশ, ২০১০-২০২০)
জাতিসংঘের উন্নয়নমূলক কর্মসূচি ২০৩০-এর মৌলিক নীতির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বৈষম্য হ্রাস করা এবং প্রবৃদ্ধি প্রক্রিয়াকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার নিরিখে বাংলাদেশের জন্য একটি অপরিহার্য পন্থা হল ‘কাউকেই পিছনে ফেলে না রাখা’। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বাংলাদেশ তার সামগ্রিক এসডিজি স্কোর ধীরে ধীরে কিন্তু ধারাবাহিক ভাবে বাড়িয়েছে, ২০১৬ সালে ৫৯.৩৭ (১০০টির মধ্যে) থেকে ২০২২ সালে ৬৪.২২ (১৬৩টি দেশের মধ্যে ১০৪তম স্থান দখল করা-সহ) হয়েছে। দেশটির কর্মক্ষমতা অন্যান্য দেশের তুলনায় পূর্ব এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলির চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও এই অঞ্চলের ১৯টি দেশের মধ্যে পাকিস্তান, ভারত, লাও পিডিআর, মঙ্গোলিয়া এবং কম্বোডিয়ার চেয়ে এগিয়ে ১৪তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।(১০৯) দেশটির স্থিতিশীল উন্নয়নের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে রয়েছে সরকারের জাতীয় পরিকল্পনায় উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর সংহতিকরণ, অবৈধ আর্থিক প্রবাহ ও অপর্যাপ্ত সম্পদ সংগ্রহ রোধ এবং এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আরও সুদৃঢ় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।(১১০)
চিত্র ১৮ : বাংলাদেশের সামগ্রিক এসডিজি স্কোর (১০০-এর মধ্যে) (২০১৬-২০২২)
বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতির একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল যে, এটি গ্রামে নিকাশি ব্যবস্থা এবং জল সরবরাহের মতো মৌলিক পরিষেবাগুলি লব্ধতার ক্ষেত্রে উন্নতি সাধনে সক্ষম এমন ছোট এবং বড় আকারের বেসরকারি সংস্থাগুলির (এনজিও) উপস্থিতিতে কর্মসাধন। এই মডেলটি জনপরিসরে এবং গৃহস্থালিতে আরও বেশি করে নারীদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করবে, যা শিশুদের স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার পাশাপাশি গড় আয়ুর বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।(১১২) ঐতিহাসিক ভাবে একটি মাঝারি আকারের একমুখী উন্নয়নমূলক বিন্যাস থাকলেও গ্লোবাল নর্থ ডিজাইন বাস্তবায়ন কৌশলগুলির প্রতিষ্ঠা স্থানীয় অংশীদারদেনর মাধ্যমে কার্যকর হয়, বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রামীণ অঞ্চলের মতো ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ গ্রামীণ অগ্রগতি কমিটির (বিআরএসি) মতো আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলির মূল ভূমিকা দ্বারা চিহ্নিত করা যায়। এই প্রতিষ্ঠানগুলি স্থানীয় প্রয়োজনীয়তা এবং সমাধানগুলির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিকল্পনা, অর্থায়ন এবং স্কেলিং-এর দায়িত্ব গ্রহণ করে, যা আরও সুনির্দিষ্ট ফলাফলের দিকে চালিত করে।
৭. বাংলাদেশ কী ভাবে অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলা করতে পারে?
বৃদ্ধির চিত্তাকর্ষক হার-সহ সামাজিক পরামিতিগুলির উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও, দেশের অর্থনীতিতে বিদ্যমান কিছু পরিকাঠামোগত ত্রুটির দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। প্রকৃত পক্ষে, গত কয়েক বছরে বৈশ্বিক অর্থনীতির সামষ্টিক অর্থনৈতিক ধাক্কা অর্থাৎ অতিমারি প্ররোচিত ব্যাঘাত, চরম জলবায়ু পরিস্থিতি, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং একটি সক্রিয় যুদ্ধের মধ্যে উন্নয়নশীল কাজকর্ম বিশেষ করে স্বল্প সম্পদ এবং কম অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতাসম্পন্ন গ্লোবাল সাউথের দেশগুলির জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। যদিও বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে, এমনটা বলা যায় না এবং প্রতিকূলতাগুলিকে স্বল্পমেয়াদি বলে বিবেচনা করা গেলেও দেশটির উচিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্থবিরতা মোকাবিলা করার জন্য এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে সম্ভাব্য যে কোনও বিপর্যয় মোকাবিলা করার জন্য এই অসুবিধাগুলি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা।
প্রথমত, রফতানি ঝুড়িতে কম বৈচিত্র্যের বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য একটি জটিল সমস্যা হলেও বয়ন ও পোশাক ক্ষেত্রে শক্তির সদ্ব্যবহার চালিয়ে যাওয়া উচিত। একই সময়ে একটি আরএমজি-কেন্দ্রিক নির্মাণ খাতের প্রতিবন্ধকতাগুলি রফতানি ঝুড়িতে সমশ্রেণিভুক্ত ঝুঁকির সঞ্চার করে। বৈশ্বিক চাহিদার বর্তমান অস্থিরতা শুধু এই খাতে প্রভাবই ফেলেছে, তা নয়, উৎপাদনের দিকটিও ব্যাপক ভাবে মানব শ্রমনির্ভর এবং দুর্বল পরিকাঠামোর বোঝাকেই তুলে ধরেছে। পরিষেবা খাতটি স্বল্পমেয়াদে আরএমজি-র পরিপূরক হয়ে ওঠে এবং দীর্ঘমেয়াদে আরএমজি-প্রধান রফতানি মিশ্রণের একটি শক্তিশালী বিকল্পও প্রদান করে।(১১৩)
দ্বিতীয়ত, দেশের কর প্রশাসন দুর্নীতিতে জর্জরিত এবং দেশে রাজস্ব সংগ্রহের পর্যাপ্ত কৌশলের অভাব রয়েছে। এর পাশাপাশি, সাম্প্রতিক সময়ে অভ্যন্তরীণ খরচ বৃদ্ধির সঙ্গে পরিবহন ব্যবস্থা এবং জ্বালানির লব্ধতার দুর্বল অবস্থা পরিকাঠামো প্রকল্পগুলির কাজ স্থগিত রেখেছে ও সরকারের জন্য রাজস্ব ঘাটতিকে প্রশস্ত করেছে। প্রকৃত পক্ষে, বাচার (১৯৯০) গবেষণা অনুসারে(১১৪), সরকারি বাজেটের সীমাবদ্ধতা মধ্যমেয়াদি বৃদ্ধিকে সীমিত করতে পারে, বিশেষ করে যখন বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতি শক্তিশালী বাহ্যিক আর্থিক ধাক্কার মোকাবিলা করছে। সরকারের জন্য অতি দ্রুত শক্তিশালী দুর্নীতিবিরোধী অগ্রগতি, উন্নত প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা(ড) এবং ব্যয় যৌক্তিকীকরণের ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিকাঠামোগত রাজস্ব বর্ধিতকরণের সঙ্গে সংযুক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তৃতীয়ত, আরএমজি-র ক্রমহ্রাসমান রফতানি, খাদ্য ও জ্বালানির মতো প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানির মূল্য বৃদ্ধি এবং রাজস্ব ঘাটতির প্রত্যক্ষ প্রভাব চলতি অ্যাকাউন্টের ভারসাম্যকে খারাপতর করলেও রফতানি উন্নয়ন কৌশলগুলির মাধ্যমে এটিকে আরও উন্নত করতে হবে এবং আমদানিকৃত সাহায্যের উপর বাংলাদেশের রফতানির নির্ভরতা কমাতে হবে। মূলত প্রতিকূল ব্যবসায়িক পরিবেশের কারইণে এফডিআই-এর পতনও মূলধন অ্যাকাউন্টে প্রভাব ফেলেছে, যা বাংলাদেশের জন্য বিওপি-এর অনিশ্চয়তাকে প্রকাশ্যে তুলে ধরেছে।
চতুর্থত, সাম্প্রতিক বৈশ্বিক ঘটনাগুলির দ্বারা প্রভাবিত আন্তঃসংযুক্ত সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরামিতিগুলি – যেমন প্রেরিত অর্থের সঙ্কোচন, বৈদেশিক মুদ্রা হ্রাস এবং বাংলাদেশি টাকার পতন – দেশীয় অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের তরফে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্বেগগুলিকে প্রকট করেছে। সমাজের অরক্ষিত অংশগুলিকে রক্ষা করার জন্য পর্যাপ্ত সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গেও তা পরিপূরক হওয়া প্রয়োজন।
পঞ্চমত, বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধানকে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে এবং বৃদ্ধির সঙ্গে আপস না করে অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎসের দিকে দ্রুত রূপান্তর ঘটাতে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের কারণে ক্রমবর্ধমান খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাম্প্রতিক মুদ্রাস্ফীতির চাপ অর্থনীতির জন্য স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে, যা আবার এই পরিসরে স্থিতিস্থাপকতার জন্য উন্নততর অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা এবং বৈচিত্র্যময় বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব তৈরিতে প্রেরণা জোগায়।
ষষ্ঠত, তৃণমূল স্তরে উন্নয়নের জন্য অনন্য মডেলের কারণে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি হওয়া সত্ত্বেও, দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য দেশটিকে তার বৈষম্যমূলক সমস্যাগুলির সমাধান করতে হবে। এই ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে সরকারকে সামাজিক ব্যয়ের খাতে আরও আর্থিক সংস্থান বরাদ্দ করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, আগামী বছরগুলিতে শক্তিশালী অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে চালিত করার জন্য অর্থনীতিতে আরও বেশি পরিমাণে সঞ্চয় এবং বিনিয়োগকে উদ্দীপিত করা।
তবে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকিও অপেক্ষমান। ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অফ পিস-এর একটি প্রতিবেধন অনুসারে, দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তন শীঘ্রই দেশের বৃদ্ধির গতিপথকে বাধাগ্রস্ত করবে। বাংলাদেশের ভূ-সংস্থানকে নিম্নভূমি হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার বৃদ্ধির ফলে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ১৫-৩০ মিলিয়ন বাংলাদেশি বাস্তুচ্যুত হতে পারেন।(১১৫) সঠিক পরিকল্পনা এবং দুর্বল শাসনব্যবস্থা ছাড়াই শহরাঞ্চলে অভিবাসন বস্তির প্রসার বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠতে পারে, যেখানে জীবনযাত্রা নিরাপত্তাহীন, সবচেয়ে খারাপ ও বিপজ্জনক। এ ভাবে, শহুরে সম্পদের উপর চাপ, ধীরগতির নির্মাণ প্রকল্প, ক্রমবর্ধমান শহুরে দারিদ্র্য এবং বায়ু ও জল দূষণের সঙ্গে আপসহীন জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান বিপদগুলির দিকে অবিলম্বে মনোযোগ দিতে হবে।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অন্তত ১৯ মিলিয়ন মানুষ তাঁদের জীবিকার জন্য বনাঞ্চলের উপর নির্ভরশীল। দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ফলস্বররূপ নগরায়ন এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়ন অন্যান্য ব্যবহারের জন্য বনাঞ্চললের জমি ব্যবহারের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়েছে, যার ফলে ‘দরিদ্রদের জিডিপি’ হিসেবে সক্রিয় বনাঞ্চল বাস্তুতন্ত্র পরিষেবাগুলি বিঘ্নিত হয়েছে।(১১৬) এই বাস্ততান্ত্রিক পরিষেবাগুলি তাদের নিয়ন্ত্রক কার্যকারিতার মাধ্যমে বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যেমন উপকূলীয় অঞ্চলে মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি, উপরের মাটির ক্ষতি, মৎস্য চাষে ক্ষতি এবং অন্যান্য বিধান পরিষেবাগুলির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা বলয় প্রদান করে। পরিবেশগত অবনতি থেকে অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রতি বছর প্রায় ৬.৫ বিলিয়ন দাঁড়িয়েছে বা জিডিপি-র ৩.৪ শতাংশের সমান।(১১৭) বাংলাদেশের সোশ্যাল কস্ট অব কার্বন (এসসিসি) ১০ মার্কিন ডলারের চেয়ে কম হলেও(১১৮) যে কোনও ধরনের প্রশমন এসসিসি হ্রাস করতে সাহায্য করবে এবং অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা তথা জিডিপি-কে বৃদ্ধি করবে। সেই কারণেই জন্য বাংলাদেশের বৈদেশিক অনুদান ও প্রযুক্তির হস্তান্তরের প্রয়োজন হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশেরও অভিযোজন তহবিলের প্রয়োজন। কারণ নিছক প্রশমন জলবায়ুগত ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে সুবিশাল জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করবে না। বাংলাদেশকে এই চাহিদাকে একটি বৈশ্বিক মঞ্চে উপস্থাপন করতে হবে এবং অন্যান্য ছোট দ্বীপ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের (এসআইডিএস) সঙ্গে কাজ করতে হবে যাদের একই রকম জলবায়ু অভিযোজনের জন্য অর্থায়নের প্রবল প্রয়োজন রয়েছে।(১১৯)
সপ্তমত, চিনা ‘ঋণ ফাঁদ’ কূটনীতিতে পা না দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে সতর্ক হতে হবে। আফ্রিকা মহাদেশে এ হেন বৃহত্তর প্রমাণ রয়েছে(১২০) যে চিনা ঋণ অর্থনীতিকে সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের নিরিখে শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানের ঘটনাগুলি বাংলাদেশের জন্য অন্যতম উদাহরণ। একই সময়ে বাংলাদেশ তার নিকটবর্তী প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে, যার উন্নয়ন সহযোগিতা মডেল চাহিদা দ্বারা চালিত।(১২১) উন্নয়ন অংশীদারিত্ব প্রকল্পে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হলে আখেরে লাভ বাংলাদেশেরই।
উপসংহার
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো দুর্দশাজনক বলে মনে হচ্ছে না। কারণ উভয় দেশই কেবল মাত্র দেশীয় লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়নি, বরং ঋণ শোধের একাধিক প্রতিশ্রুতি দ্বারাও জর্জরিত হয়েছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ও জিডিপি-র অনুপাত দাঁড়িয়েছে ১১.৮৭ শতাংশে, যা আইএমএফ-এর বাধ্যতামূলক মাত্রা অর্থাৎ ৪০ শতাংশের চেয়ে অনেকটাই কম। এমনকি দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণ ও জিডিপি অনুপাত ১৯.৫৫ শতাংশ যোগ করেও, মোট ঋণ ও জিডিপি-র অনুপাত ৩১.৪২ শতাংশ হলেও ২০২২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে কোনও উদ্বেগ প্রকাশ করেনি।(১২২)
তা সত্ত্বেও, দেশের বাহ্যিক ঋণ ও রফতানির অনুপাত ১২৫, যা ভিয়েতনাম (২৫), মলদ্বীপ (৯০), ভুটান (১৯) এবং নেপালের (৩০) মতো দক্ষিণ এশিয় এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয় বহু দেশের চেয়ে অনেকটাই বেশি। এই অনুপাত আইএমএফ-এর ধার্য করা ২৪০-এর অনেকটাই নীচে থাকলেও ২০১৮ সাল থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বাংলাদেশের উচ্চ সূচক এবং তার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেশটির বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে চাপ ও উদ্বেগ বাড়ায়।(১২৩) তবুও দেশের স্বল্পমেয়াদি ঋণ (মোট বৈদেশিক ঋণের শতাংশ হিসাবে) ২০১৭ সালে ২৩ শতাংশ থেকে ২০২০ সালে ১৬.২ শতাংশে সামান্য হ্রাস পেয়েছে।(১২৪) সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরামিতিতে এই টানাপড়েন কমানোর জন্য দেশের রফতানি খাতের কর্মক্ষমতাকে জোরদার করতে হবে।
কোভিড-১৯ এবং ইউক্রেন সংঘাতের ফলে বহিরাগত সামষ্টিক অর্থনৈতিক ধাক্কার কারণে বৃদ্ধির মন্দার প্রাথমিক লক্ষণগুলি প্রকাশ্যে উঠে আসছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির পরিকাঠামোগত দুর্বলতাগুলি সম্পর্কে সম্যক ধারণা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং স্থিতিশীল উন্নয়নের দিকে পদক্ষেপকে সুনিশ্চিত করতে পারে।
তাই অবিলম্বে সমাজের দরিদ্র অংশগুলির জন্য সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রসারিত করাই অপরিহার্য, যাঁরা পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থা দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হন। বাংলাদেশের যে কোনও সামষ্টিক অর্থনৈতিক পুনর্গঠনকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতির মৌলিক নীতি দ্বারা পরিচালিত হতে হবে।
পরিশিষ্ট :
চিত্র ক : বাংলাদেশের জিডিপি-র ক্ষেত্রভিত্তিক ভাঙন (২০১১-২০২১)
চিত্র খ : বাংলাদেশে বেকারত্বের হার (১৯৯১-২০০১)
চিত্র গ : বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (মিলিয়ন মার্কিন ডলারে) (২০১২-২০২২)
চিত্র ঘ : বাংলাদেশের বকেয়া বহিরাগত ঋণ (বিলিয়ন মার্কিন ডলারে) (২০১২-২০২২)
পাদটিকা:
(ক) ২০১১ সালের ক্রয়ক্ষমতা সমতা বিনিময় হার ব্যবহার করে প্রতি দিন ১.৯০ মার্কিন ডলারের আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য সীমার উপর ভিত্তি করে।
(খ) (১) ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ‘নিম্ন উপার্জনকারী দেশ’ থেকে ‘নিম্ন-মধ্য উপার্জনকারী দেশ’-এর মর্যাদা পায়; (২) দেশটি ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় স্থান করে নেওয়ার পথে রয়েছে; (৩) বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যের পথে এগোচ্ছে। দ্রষ্টব্য: ‘ওভারভিউ,’ বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাঙ্ক।
(গ) সরকার আর্থিক সহায়তার জন্য এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক (এআইআইবি) এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জেআইসিএ) সঙ্গেও আলোচনা করবে। ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত জাপানের দ্বিপাক্ষিক ঋণের সর্বোচ্চ শতাংশ (বাংলাদেশের মোট দ্বিপাক্ষিক ঋণের মধ্যে) ছিল ৪৫ শতাংশ। দ্রষ্টব্য: ‘বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ও জিডিপি অনুপাত ১১%, আইএমএফ-র ৪০% মাত্রার অনেকটাই নীচে,’ সর্বভারতীয় রেডিয়ো, নিউজ সার্ভিস বিভাগ, ১২ অগস্ট, ২০২২।
(ঘ) ‘ফাস্ট ফ্যাশন’ বা ‘দ্রুত ফ্যাশন’ বলতে পোশাক শিল্পের সমসাময়িক ব্যবসায়িক মডেলকে বোঝায়, যা উচ্চ-ফ্যাশন ডিজাইন এবং ক্যাটওয়াক প্রবণতার দ্বারা চিহ্নিত এবং যা স্বল্প সময়ের মধ্যে উচ্চ চাহিদা মেটাতে কম খরচে উচ্চ লাভ রেখে ব্যাপক ভাবে উৎপাদিত করা সম্ভব। দ্রষ্টব্য: ক্যাথরিন স্যাক্সন, ‘ফাস্ট ফ্যাশন কী? সংজ্ঞা, সমস্যা, উদাহরণ,’ দ্য ভ্যু, অগস্ট ২৩, ২০২২।
(ঙ) এগুলির মধ্যে ইস্পাত, রাসায়নিক এবং পরিবহন সংক্রান্ত সরঞ্জাম অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
(চ) বিপুল সংখ্যক পোশাক ব্যবসায়ীরাও রফতানি রসিদ পেতে পারেননি। কারণ রাশিয়াকে বৈশ্বিক অর্থপ্রদানকারী নেটওয়ার্ক সুইফট ব্যবহার করা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
(ছ) প্যাকেজের মধ্যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ব্যয়, কম সুদের হারে ঋণের বিধান, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ব্যয় এবং সম্প্রসারণমূলক আর্থিক ও রাজস্ব নীতি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
(জ) ‘হোয়াইট এলিফেন্ট প্রজেক্ট’ বা ‘সাদা হাতি প্রকল্প’ নামেও পরিচিত যা বিপুল আকারের, ব্যয়বহুল উদ্যোগ এবং যার নির্মাণ ব্যয় ও রক্ষণাবেক্ষণ তার প্রয়োজনীয়তা এবং উপযোগিতার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়।
(ঝ) অর্থপ্রদানের ভারসাম্য একটি অর্থনীতিতে ব্যক্তি, সংস্থা এবং সরকারি সংস্থাগুলির দ্বারা সম্পাদিত আর্থিক লেনদেনের মোৎ মূল্যকে বোঝায়। এটি কারেন্ট অ্যাকাউন্ট (বাণিজ্যিক সমতা এবং অদৃশ্য ও দৃশ্যমান বাণিজ্য থেকে প্রদত্ত মোট আয়) এবং ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট (দেশের সম্পদের মালিকানায় মোট পরিবর্তন) নিয়ে গঠিত।
(ঞ) মুন্ডেল-ফ্লেমিং মডেল হল এমন একটি অর্থনৈতিক মডেল যা অর্থনীতির নামমাত্র বিনিময় হার, সুদের হার এবং আউটপুট ও বিভিন্ন সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরামিতির উপর তাদের প্রভাবের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি সম্পর্ককে চিত্রিত করে।
(ট) দক্ষিণ এশিয় অঞ্চলে সমসাময়িক অর্থনৈতিক সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে, গত এক বছরে বাংলাদেশি টাকার মূল্যের পতন একই সময়সীমায় প্রায় ৩.১৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা ভারতের ৮.৫৬ শতাংশ, পাকিস্তানের ৩০.১৮ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কার ৭৯.৮২ শতাংশের তুলনায় নামমাত্র বলে মনে হতে পারে। দ্রষ্টব্য : একেএম জমির উদ্দিন, ‘টাকা এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পতনের সম্মুখীন হয়েছে,’ দ্য ডেইলি স্টার, নভেম্বর ১, 2022।
(ঠ) জিনি গুণাঙ্ক হল একটি দেশের অর্থনৈতিক বৈষম্যের পরিমাপ, যেখানে ০ এবং ১-এর স্কোর যথাক্রমে অর্থনীতিতে নিখুঁত সমতা এবং ত্রুটিহীন অসমতাকেই নির্দেশ করে।
(ড) প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা হল এমন এক ব্যবস্থা, যেখানে করের হার করযোগ্য পরিমাণের সঙ্গে বৃদ্ধি পায় এবং যেখানে কার্যকর ভাবে ধনীদের সরাসরি দরিদ্রদের তুলনায় বেশি কর দেওয়া হয়।
১) বিশ্ব ব্যাঙ্ক, ‘গ্লোবালি বাংলাদেশ ইজ আ মডেল ফর পভার্টি রিডাকশন, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক’, বিশ্ব ব্যাঙ্ক,
https://www.worldbank.org/en/news/press-release/2020/01/29/globally-bangladesh-is-a-model-for-poverty-reduction-world-bank
২) বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাঙ্ক, ‘বাংলাদেশ ওভারভিউ : ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড গ্রোথ’, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, https://www.worldbank.org/en/country/bangladesh/overview
৩) বিশ্ব ব্যাঙ্ক, ‘পভার্টি হেডকাউন্ট রেশিও ২.১৫ ডলার আ ডে (২০১৭ পিপিপি) (% অব পপুলেশন) বাংলাদেশ’, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, https://data.worldbank.org/indicator/SI.POV.DDAY?locations=BD
৪) বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য, ‘জিডিপি গ্রোথ (অ্যানুয়াল%)- বাংলাদেশ’, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, https://data.worldbank.org/indicator/NY.GDP.MKTP.KD.ZG?locations=BD
৫) বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য, ‘জিডিপি পার ক্যাপিটা (কারেন্ট ইউএন ডলার)- বাংলাদেশ’, বিশ্ব ব্যাঙ্ক https://data.worldbank.org/indicator/NY.GDP.PCAP.CD?locations=BD
৬) রেজাউল করিম বায়রন এবং আশিফুর রহমান, ‘১% অব বাংলাদেশ’জ পপুলেশন হোল্ডস ১৬.৩% অব ন্যাশনাল ইনকাম’, দ্য ডেইলি স্টার, নভেম্বর ২, ২০২২, https://www.thedailystar.net/news/bangladesh/news/inequality-increasing-2913046
৭) দিয়েগো রোজাস, ‘হাউ দ্য ক্লাইমেট ক্রাইসিস ইজ ইমপ্যাক্টিং বাংলাদেশ’, দ্য ক্লাইমেট রিয়্যালিটি প্রজেক্ট ব্লগ, প্রকাশিত ডিসেম্বর ৯, ২০২১
৮) পিনাকী রায়, রাশিদুল হাসান, মহিউদ্দিন আলমগির, ‘আমফান ইনফ্লিক্টস ম্যাসিভ ড্যামেজ’, দ্য ডেইলি স্টার, নভেম্বর ২, ২০২২, https://www.thedailystar.net/frontpage/news/amphan-inflicts-massive-damage-1904977
৯) রেজাউল করিম বায়রন, ‘গভর্নমেন্ট টার্নিং টু অল পার্টনারস ফর বাজেট সাপোর্ট,’ দ্য ডেইলি স্টার, নভেম্বর ২, ২০২২,
https://www.thedailystar.net/news/bangladesh/news/govt-turns-all-partners-budget-support-3082081
১০) ‘বাংলাদেশেজ ফরেন ডেবট টু জিডিপি রেশিও ১১%, ওয়েল বিলো দ্য আইএমএফ থ্রেশহোল্ড অব ৪০%’, নিউস সার্ভিসেস ডিভিশন, অল ইন্ডিয়া রেশিও, অগস্ট ১২, ২০২২
১১) জুলিয়ান ফ্রান্সিস, ‘রিমেম্বারিং দ্য গ্রেট ভোলা সাইক্লোন’, ঢাকা ট্রিবিউন, নভেম্বর ৭, ২০১৯, https://archive.dhakatribune.com/opinion/op-ed/2019/11/08/remembering-the-great-bhola-cyclone
১২) কৌশিক বসু, ‘বাংলাদেশ অ্যাট ৫০’, ব্রুকিংস, মার্চ ২৬, ২০২১, https://www.brookings.edu/opinions/bangladesh-at-50/
১৩) বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য, ‘জিডিপি গ্রোথ (অ্যানুয়াল%)- পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া’, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, https://data.worldbank.org/indicator/NY.GDP.MKTP.KD.ZG?locations=PK-BD-IN
১৪) বিশ্ব ব্যাঙ্ক ‘জিডিপি গ্রোথ (অ্যানুয়াল%)- বাংলাদেশ’
১৫) সেলিম রেইহান এবং সুনেরা সাবা খান, ‘স্ট্রাকচারাল ট্রান্সফর্মেশন, ইনিকুয়ালিটি ডায়নামিক্স অ্যান্ড ইনক্লুসিভ গ্রোথ ইন বাংলাদেশ’, ওয়াইডার ওয়ার্কিং পেপার ২০২০/৪৪, এপ্রিল ২০২০, ইউএনইউ-ওয়াইডার,
https://www.wider.unu.edu/sites/default/files/Publications/Working-paper/PDF/wp2020-44.pdf
১৬) শাকিলা সালাম, ‘স্ট্রাকচার অ্যান্ড ফিউচার ডেভেলপমেন্ট অব দ্য সার্ভিস সেক্টর ইন বাংলাদেশ’, ইউরোপিয়ান জার্নাল অব সার্ভিস ম্যানেজমেন্ত, ২০(৪/২০১৬) : ৪৯-৫৫, ফেব্রুয়ারি, ২০১৭,
https://www.researchgate.net/publication/313608139_Structure_and_future_development_of_the_service_sector_in_Bangladesh
১৭) মহম্মদ শাহিদুল ইসলাম, মহম্মদ মুসা এবং রাজীব কান্তি দাস, ‘দ্য কম্প্যারেটিভ গ্রোথ অব সার্ভিস সেক্টর ইন বাংলাদেশ’, আইআইএসটিই পেপার, আইএসএসএন ২২২২-২৮৪৭, ২০১২, আইআইএসটিই, https://core.ac.uk/download/pdf/234629298.pdf
১৮) বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য, ‘সার্ভিসেস, ভ্যালু অ্যাডেড (% অব জিডিপি)’, বিশ্ব ব্যাঙ্ক,
https://data.worldbank.org/indicator/NV.SRV.TOTL.ZS?end=2021&locations=BD&start=1978&view=chart
১৯) বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য, ‘টেক্সটাইলস অ্যান্ড ক্লোদিং (% অব ভ্যালু অ্যাডেড ইন ম্যানুফ্যাকচারিং) – বাংলাদেশ’, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, https://data.worldbank.org/indicator/NV.MNF.TXTL.ZS.UN?locations=BD
২০) বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য, ‘মিডিয়াম অ্যান্ড হাই-টেক ম্যানুফ্যাকচারিং ভ্যালু অ্যাডেড (% ম্যানুফ্যাকচারিং ভ্যালু অ্যাডেড) – বাংলাদেশ’, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, https://data.worldbank.org/indicator/NV.MNF.TECH.ZS.UN?locations=BD
২১) বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য, ‘ম্যানুফ্যাকচারিং ভ্যালু অ্যাডেড (% অব জিডিপি) – বাংলাদেশ’, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, https://data.worldbank.org/indicator/NV.IND.MANF.ZS?locations=BD
২২) এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক, ‘বাংলাদেশ কনসলিডেটিং এক্সপোর্ট – লেড গ্রোথ : কান্ট্রি ডায়গনস্টিক স্টাডি’, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক, https://www.adb.org/sites/default/files/publication/190610/ban-export-led-growth-cds.pdf
২৩) মিনিস্ট্রি অব কমার্স, ‘এক্সপোর্ট পলিসি ২০১৮-২১’, গভর্নমেন্ট অব বাংলাদেশ, ২০১৮
২৪) অচিম বার্গ, হর্ষ ছাপারিয়া, সাসকিয়া হেডরিক এবং কার্ল হেনড্রিক ম্যাগনাসের মন্তব্য, ‘হোয়াটস নেক্সট ফর বাংলাদেশ’জ গারমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি, আফটার আ ডেকেড অব গ্রোথ’, ম্যাককিনসে অ্যান্ড কোম্পানি, মন্তব্য প্রকাশিত হয় মার্চ ২৫, ২০২১,
https://www.mckinsey.com/industries/retail/our-insights/whats-next-for-bangladeshs-garment-industry-after-a-decade-of-growth
২৫) শাহিদ ইউসুফ, মন্তব্য, ‘বাংলাদেশ : গ্রোথ মির্যাকল অর মির্যাজ?’, সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট, মন্তব্য প্রকাশিত হয় জুন ১৬, ২০২১
https://www.cgdev.org/blog/bangladesh-growth-miracle-or-mirage
২৬) শাকিলা সালাম, ‘স্ট্রাকচার অ্যান্ড ফিউচার ডেভেলপমেন্ট অব সার্ভিস সেক্টর ইন বাংলাদেশ’
২৭) ‘রাশিয়া-ইউক্রেন ওয়ার ইমপ্যাক্টস বাংলাদেশ আরএমজি এক্সপোর্টস’, টেক্সটাইল এক্সেলেন্স, মার্চ ৩, ২০২২, https://www.textileexcellence.com/news/russia-ukraine-war-impacts-bangladesh-rmg-exports/
২৮) অচিম বার্গ, হর্ষ ছাপারিয়া, সাসকিয়া হেডরিক এবং কার্ল হেনড্রিক ম্যাগনাসের মন্তব্য, ‘হোয়াটস নেক্সট ফর বাংলাদেশ’জ গারমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি, আফটার আ ডেকেড অব গ্রোথ’
২৯) অচিম বার্গ, হর্ষ ছাপারিয়া, সাসকিয়া হেডরিক এবং কার্ল হেনড্রিক ম্যাগনাসের মন্তব্য, ‘হোয়াটস নেক্সট ফর বাংলাদেশ’জ গারমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি, আফটার আ ডেকেড অব গ্রোথ’
৩০) ‘বাংলাদেশ গারমেন্ট এক্সপোর্ট গ্রোথ সিন স্লোয়িং টু ‘নরমাল’ ১৫% দিস ইয়ার’, ফ্যাশন নেটওয়ার্ক, অগস্ট ১১, ২০২২
৩১) অচিম বার্গ, হর্ষ ছাপারিয়া, সাসকিয়া হেডরিক এবং কার্ল হেনড্রিক ম্যাগনাসের মন্তব্য, ‘হোয়াটস নেক্সট ফর বাংলাদেশ’জ গারমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি, আফটার আ ডেকেড অব গ্রোথ’
৩২) শাহিদ ইউসুফ, মন্তব্য, ‘বাংলাদেশ : গ্রোথ মির্যাকল অর মির্যাজ?’
৩৩) মিনিস্ট্রি অব ফিন্যান্স, ‘বাজেট অ্যাট আ গ্লান্স : ২০২২-২৩’, গভর্নমেন্ট অব বাংলাদেশ
৩৪) ‘দ্য কোভিড-১৯ ফলআউট অন দ্য সিএমএসএমইএস ইন বাংলাদেসগ অ্যান্ড পলিসি রেসপন্সেস : অ্যান অ্যাসেসমেন্ট জুন ২০২১ চিফ ইকোনমিস্ট’স ইউনিট বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক’, পলিসি নোট : পিএন ২১০৩, চিফ ইকোনমিস্ট’স ইউনিট, বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক, জুন ২০২১, https://www.bb.org.bd/pub/research/policynote/pn2103.pdf
৩৫) মিনিস্ট্রি অব ফিন্যান্স, ‘ফিসকাল পলিসি অ্যান্ড ফিসকাল ম্যানেজমেন্ট’, বাংলাদেশ ইকোনমিক রিভিউ ২০২১
৩৬) মিনিস্ট্রি অব ফিন্যান্স, ‘ফিসকাল পলিসি অ্যান্ড ফিসকাল ম্যানেজমেন্ট’
৩৭) সুরজিত এস ভাল্লা, ‘ইন্ডিয়া’স ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও মে বি টু হাই’, দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, নভেম্বর ২, ২০২২
৩৮) বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য, ‘ট্যাক্স রেভিনিউ (% অব জিডিপি) – শ্রীলঙ্কা, ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, মায়ানমার, তাইল্যান্ড’, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, https://data.worldbank.org/indicator/GC.TAX.TOTL.GD.ZS?end=2020&locations=LK-IN-BD-BT-NP-MM-TH&start=2020&view=bar
৩৯) ভিটর গ্যাসপার, লাওরা জারামিল্লো এবং ফিলিপ উইনজেন্ডার, ‘ট্যাক্স ক্যাপাসিটি অ্যান্ড গ্রোথ : ইজ দেয়ার আ টিপিং পয়েন্ট?’, আইএমএফ ওয়ার্কিং পেপার নম্বর ডব্লিউপি/১৬/২৩৪, ২০১৬,
https://www.imf.org/external/pubs/ft/wp/2016/wp16234.pdf
৪০) ক্রিস্টোফার ফিনিগান, মন্তব্য, ‘ট্যাকলিং ট্যাক্স ইভেশন ইন বাংলাদেশ,’ এলএসই সাউথ এশিয়া ব্লগ, দ্য লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স, মন্তব্য প্রকাশিত হয় জুলাই ১, ২০১৯, https://blogs.lse.ac.uk/southasia/2019/07/01/tackling-tax-evasion-in-bangladesh/
৪১) ক্রিস্টোফার ফিনিগান, মন্তব্য, ‘ট্যাকলিং ট্যাক্স ইভেশন ইন বাংলাদেশ’
৪২) বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক, ‘ট্রেন্ডস অব দ্য রিয়েল সেক্টর অব বাংলাদেশ ইকোনমি,’ অ্যানুয়াল রিপোর্ট ২০২১, বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক, https://www.bb.org.bd/pub/annual/anreport/ar2021/chap2.pdf
৪৩) ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ‘বাংলাদেশ-কান্ট্রি কমার্শিয়াল গাইড’, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
৪৪) পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী, ‘বাংলাদেশ গ্র্যাপলস উইথ ইকোনমিক স্ট্রেস’, দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, অগস্ট ১৯, ২০২২, https://www.newindianexpress.com/opinions/2022/aug/19/bangladeshgrapples-with-economic-stress-2489052.html
৪৫) মিনিস্ট্রি অব ফিন্যান্স, ‘ফিসকাল পলিসি অ্যান্ড ফিসকাল ম্যানেজমেন্ট’
৪৬) আলি রিয়াজ, মন্তব্য, ‘বাংলাদেশ’জ ইকোনমিক ক্রাইসিস : হাউ ডিড উই গেট হিয়ার?’, দি আটলান্টিক কাউন্সিল, মন্তব্য প্রকাশিত হয়, অগস্ট ৫, ২০২২, https://www.atlanticcouncil.org/blogs/southasiasource/bangladeshs-economic-crisis-how-did-we-get-here/
৪৭) ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার এনহ্যান্সমেন্টস উইল আন্ডারপিন গ্রোথ ইন ঢাকা,’ ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০, https://www.eiu.com/n/infrastructure-enhancements-will-underpin-growth-in-dhaka/
৪৮) বিশ্ব ব্যাঙ্ক, ‘জিডিপি গ্রোথ (অ্যানুয়াল%)- বাংলাদেশ’
৪৯) সেলিম রেইহান এবং সুনেরা সাবা খান, ‘স্ট্রাকচারাল ট্রান্সফর্মেশন, ইনিকুয়ালিটি ডায়নামিক্স অ্যান্ড ইনক্লুসিভ গ্রোথ ইন বাংলাদেশ’
৫০) রেজাউল করিম বায়রন, ‘ব্যাড লোনস টোয়াইস অ্যাজ লার্জ’, দ্য ডেইলি স্টার, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯,
https://www.thedailystar.net/frontpage/default-loan-in-bangladesh-is-more-than-double-reports-imf-1805437
৫১) ‘বাংলাদেশ’জ এক্সপোর্টস হিট অল টাইম হাই অফ ওভার ৫২ ডলার বিএন ইন এফওয়াই ২০২১-২২’, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, জুলাই ৪, ২০২২,
https://www.business-standard.com/article/international/bangladesh-s-exports-hit-all-time-high-of-over-52-bn-in-fy-2021-22-122070400034_1.html
৫২) একীম জামির উদ্দিন, ‘জুলাই ট্রেড ডেফিসিট ফার বিলো এফওয়াই ২২’জ মান্থলি অ্যাভারেজ’, দ্য ডেইলি স্টার, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২, https://www.thedailystar.net/business/economy/news/july-trade-deficit-far-below-fy22s-monthly-average-3111216
৫৩) বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের তথ্য, ‘বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক ওপেন ডেটা ইনিশিয়েটিভ’, বাংলদেশ ব্যাঙ্ক, https://www.bb.org.bd/en/index.php/econdata/index
৫৪) ‘বাংলাদেশ ট্রেড ব্যালান্স ১৯৬০-২০২২’, মাইক্রোট্রেন্ডস
৫৫) ‘বাংলাদেশ ট্রেড ব্যালান্স ১৯৬০-২০২২’
৫৬) শাহিদ ইউসুফ, মন্তব্য, ‘বাংলাদেশ : গ্রোথ মির্যাকল অর মির্যাজ?’
৫৭) সোহেল পারভেজ, ‘এফওয়াই২২ ক্লোজড উইথ রেকর্ড ১৮.৭ বিলিয়ন ডলার কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট’, দ্য ডেইলি স্টার, অগস্ট ২, ২০২২, https://www.thedailystar.net/business/economy/news/fy22-closed-record-187b-current-account-deficit-3085611
৫৮) বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক, ‘ব্যালান্স অব পেমেন্টস’, বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক, https://www.bb.org.bd/en/index.php/publication/publictn/0/3
৫৯) সীমা রানি দে এবং মহম্মদ তারেক, ‘টুইন ডেফিসিটস হাইপোথিসিস ইন বাংলাদেশ : অ্যান এম্পিরিক্যাল ইনভেস্টিগেশন’, ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ইমার্জিং মার্কেটস, মার্চ ২০২১, https://www.researchgate.net/publication/349686455_Twin_deficits_hypothesis_in_Bangladesh_an_empirical_investigation
৬০) উমির জেলানে বন্দে এবং রঞ্জন অনেজা, ‘টুইন ডেফিসিট হাইপোথিসিস অ্যান্ড রিভার্স কজালটি : আ কেস স্টাডি অব চায়না’, নেচার, ৯৩, ২০১৯
৬১) হো-দন ইয়ান এবং চেং-ল্যাং ইয়াং, ‘আর দেয়ার ডিফারেন্ট লিঙ্কেজেস অভ ফরেন ক্যাপিটাল ইনফ্লোজ অ্যান্ড দ্য কারেন্ট অ্যাকাউন্ট বিটুইন ইন্ডাস্ট্রিয়াল কান্ট্রিজ অ্যান্ড ইমার্জিং মার্কেটস?’, স্প্রিঙ্গার লিঙ্ক পেপার, মে ২৭, ২০১১,
https://link.springer.com/article/10.1007/s00181-011-0478-8
৬২) হো-দন ইয়ান, ‘ক্যাজুয়াল রিলেশনশিপ বিটুইন দ্য কারেন্ট অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড দ্য ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট’, স্প্রিঙ্গার লিঙ্ক পেপার, মে ২৭, ২০০৫, https://link.springer.com/article/10.1007/s11294-005-3012-y
৬৩) বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য, ‘ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট, নেট ইনফ্লোজ (% জিডিপি) – বাংলাদেশ’, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, https://data.worldbank.org/indicator/BX.KLT.DINV.WD.GD.ZS?locations=BD
৬৪) বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য, ‘নেট ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট (বিওপি, কারেন্ট ইউএস ডলার) – বাংলাদেশ’, বিশ্ব ব্যাঙ্ক,
https://data.worldbank.org/indicator/BN.TRF.KOGT.CD?locations=BD
৬৫) রেজাউল করিম বায়রন অ্যান্ড দ্বৈপায়ন বড়ুয়া, ‘প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট হিটস আ ট্রাফ’, দ্য ডেইলি স্টার, অগস্ট ৮, ২০২১,
https://www.thedailystar.net/business/economy/industries/investments/news/private-investment-hits-trough-2147471
৬৬) ‘২০২১ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট স্টেটমেন্টস’, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট
৬৭) আবু আফসারুল হায়দার, ‘হোয়াই ইজ ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট সো লো ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড হাউ টু ইনক্রিজ ইট?’ দ্য ডেইলি স্টার, অগস্ট ২৩, ২০২১, https://www.thedailystar.net/views/opinion/news/why-foreign-direct-investment-so-low-bangladesh-and-how-increase-it-2158151
৬৮) ‘২০২১ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট স্টেটমেন্টস’, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট
৬৯) বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক, মনিটরি পলিসি রিভিউ, ঢাকা, https://www.bb.org.bd/en/index.php/publication/publictn/0/24
৭০) সয়ফুল ইসলাম, ‘অস্টারিটি মে সেভ ৩৫০ বিলিয়ন টাকা’, দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস, জুলাই ২৩, ২০২২, https://thefinancialexpress.com.bd/economy/bangladesh/austerity-may-save-tk-350b-1661221602
৭১) ডায়েটমার মেয়ার এবং অ্যাডেলা শেরা, ‘দি ইমপ্যাক্ট অব রেমিট্যান্সেস অন ইকোনমিক গ্রোথ : অ্যান ইকোনমেট্রিক মডেল’, ইকোনমিয়া ১৮, নম্বর ২ (মে ১, ২০১৭) : ১৪৭-৫৫
৭২) ‘বাংলাদেশ ফেসেস আ ক্রাইসিস ইন রেমিট্যান্সেস অ্যামিড কোভিড-১৯’, ইউনিসেফ, জুন ২০২০, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম,
https://migrantmoney.uncdf.org/docs/bangladesh-faces-a-crisis-in-remittances-amid-covid-19
৭৩) ‘বাংলাদেশ রেমিট্যান্সেস ফল ১৫% ইয়ার অন ইয়ার ইন এফওয়াই২২’, বিডিনিউজ২৪, জুলাই ৪, ২০২২, https://bdnews24.com/economy/2022/07/04/bangladesh-remittances-fall-15-year-on-year-in-fy22
৭৪) ‘ওয়েজ আর্নারস রেমিট্যান্সেস ইনফ্লোজ (মান্থলি)’, বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক, ২০২১, https://www.bb.org.bd/en/index.php/econdata/bop_remittance/2
৭৫) একেএম জমির উদ্দিন, ‘টাকা সাফারস স্টিপেস্ট ফল ইন আ ডেকেড,’ দ্য ডেইলি স্টার, মে ১৭, ২০২২, https://www.thedailystar.net/business/economy/news/taka-suffers-steepest-fall-decade-3025206
৭৬) গোলাম রসুল, ‘হাউ গ্লোবাল ইকোনমিক ইনস্টেবিলিটি ইজ হার্টিং বাংলাদেশ, আনটিল রিসেন্টলি অ্যান এশিয়ান টাইগার ইন দ্য মেকিং’, স্ক্রল ডট ইন, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২,
https://scroll.in/article/1031735/how-global-economic-instability-is-hurting-bangladesh-until-recently-an-asian-tiger-in-the-making
৭৭) গোলাম রসুল, ‘হাউ গ্লোবাল ইকোনমিক ইনস্টেবিলিটি ইজ হার্টিং বাংলাদেশ, আনটিল রিসেন্টলি অ্যান এশিয়ান টাইগার ইন দ্য মেকিং’
৭৮) ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ (মান্থলি)’, বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক, ২০২২, https://www.bb.org.bd/en/index.php/econdata/intreserve
৭৯) নীলরতন হালদার, ‘ডিপ্রেসিয়েশন অব টাকা অ্যান্ড ইটস ইমপ্যাক্ট’, দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস, মে ১৯, ২০২২,
https://thefinancialexpress.com.bd/views/depreciation-of-taka-and-its-impact-1652974841
৮০) আনিসুর রহমান, ‘পিএম শেখ হাসিনা ডিসপেলস পসিবিলিটি অব শ্রীলঙ্কা-লাইক ইকোনমিক ক্রাইসিস ক্রাইসিস ইন বাংলাদেশ’, দ্য প্রিন্ট, অগস্ট ৩০, ২০২২
৮১) ‘বাংলাদেশ’, আইইএ ড্যাশবোর্ড,
https://www.iea.org/countries/bangladesh
৮২) ‘লাইটিং আপ রুরাল কমিউনিটিজ ইন বাংলাদেশ : দ্য সেকেন্ড রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভেপলপমেন্ট প্রজেক্ট’, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক
৮৩) ‘বাংলাদেশ’, আইইএ ড্যাশবোর্ড
৮৪) ‘বাংলাদেশ – পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি’, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাডমিনিস্ট্রেশেন, জুলাই ২০, ২০২২,
https://www.trade.gov/country-commercial-guides/bangladesh-power-and-energy
৮৫) জায়মা ইসলাম, ‘ক্যাপাসিটি পেমেন্টস ফর পাওয়ার প্ল্যান্টস : ওয়ান থার্ড গোজ টু থ্রি ফার্মস’, দ্য ডেইলি স্টার, অগস্ট ৩১, ২০২২,
https://www.thedailystar.net/environment/natural-resources/energy/news/capacity-payments-power-plants-one-third-goes-three-firms-3107181
৮৬) ‘ফরেন একচেঞ্জ রিজার্ভ (মান্থলি)’
৮৭) গ্যাব্রিয়েলা কেসবার্গ ডাভালোজ, ‘হোয়াট দ্য রাশিয়া-ইউক্রেন ওয়ার মিনস ফর বাংলাদেশ’জ ইকোনমি’, সাদার্ন ভয়েস, মে ১৬, ২০২২
৮৮) ‘দ্য পাওয়ার সেক্টর অব বাংলাদেশ ২০২১’, বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এক্সটার্নাল ডেট, অক্টোবর ২৯, ২০২২,
https://bwged.blogspot.com/2022/03/the-power-sector-of-bangladesh-2021.html
৮৯) ইজাজ হোসেন, ‘নো প্ল্যানিং : দ্য রুট কজ অফ ইলস ইন বাংলাদেশ’জ পাওয়ার সেক্টর’, দ্য ডেইলি স্টার, জুলাই ২৬, ২০২২,
https://www.thedailystar.net/opinion/views/news/no-planning-the-root-cause-ills-bangladeshs-power-sector-3080006
৯০) খোন্দাকার গোলাম মোয়াজ্জেম, ‘দ্য পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি সেক্টর অব বাংলাদেশ : চ্যালেঞ্জেস অব মুভিং বিয়ন্ড দ্য ট্রানজিশন স্টেজ’ (পেপার প্রেজেন্টেড অ্যাট পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি সেক্টর : ইমিডিয়েট ইস্যুজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ কনফারেন্স, ঢাকা, ২০১৯),
https://think-asia.org/bitstream/handle/11540/10317/The-Power-and-Energy-Sector-of-Bangladesh.pdf?sequence=1
৯১) ‘বাংলাদেশ – পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি’, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন,
https://www.trade.gov/country-commercial-guides/bangladesh-power-and-energy
৯২) মোয়াজ্জেম, ‘দ্য পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি সেক্টর অব বাংলাদেশ : চ্যালেঞ্জেস অব মুভিং বিয়ন্ড দ্য ট্রানজিশন স্টেজ’, সিপিডি, https://think-asia.org/bitstream/handle/11540/10317/The-Power-and-Energy-Sector-of-Bangladesh.pdf?sequence=1
৯৩) মোয়াজ্জেম, ‘দ্য পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি সেক্টর অব বাংলাদেশ : চ্যালেঞ্জেস অব মুভিং বিয়ন্ড দ্য ট্রানজিশন স্টেজ’
৯৪) ‘বাংলাদেশ – পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি’, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
৯৫) ‘ডিজেল প্রাইস হাইকড বাই ৩৪ টাকা পার লিটার, অকটেন বাই ৪৬ টাকা’, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্দ, অগস্ট ৫, ২০২২,
https://www.tbsnews.net/bangladesh/energy/diesel-price-hiked-tk34-litre-octane-tk46-472178
৯৬) শরিফুল এলাহি, ‘হোয়াই বাংলাদেশ হ্যাড টু অ্যাডজাস্ট ফুয়েল প্রাইসেস সাডেনলি’, ইউরেশিয়া রিভিউ, অগস্ট ১১, ২০২২, https://www.eurasiareview.com/11082022-why-bangladesh-had-to-adjust-fuel-prices-suddenly-oped/
৯৭) মহম্মদ রহমান হাবিবুর, ‘মনিটরি পকিসি রিভিউ’, বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক, ডিসেম্বর, ২০২১, https://www.bb.org.bd//pub/halfyearly/monetaryprev/mpr_dec_2021.pdf
৯৮) ‘বাংলাদেশ ইনফ্লেশন রেট’, ট্রেডিং ইকোনমিকস, অগস্ট ২৪, ২০২২
৯৯) ‘কারেন্ট ইনফ্লেশন’, বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক, সেপ্টেম্বর ২০২২, https://www.bb.org.bd/en/index.php/econdata/inflation
১০০) মহম্মদ আখতার হোসেন, ‘ইমপ্যাক্ট অন ফিসকাল ডেফিসিটস ইন দ্য বাংলাদেশ ইকোনমি’, দ্য পাকিস্তান ডেভেলপমেন্ট রিভিউ ২৬, নম্বর ২ (১৯৮৭) : ১৭৯-২০০, https://www.jstor.org/stable/41258888
১০১) ‘বাংলাদেশ ইমপ্রুভস ইটস হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স র্যাঙ্কিং’, নিউজঅনএয়ার, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২
১০২) ‘বাংলাদেশ’, হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিপোর্টস – ইউনাইটেড নেশনস, অগস্ট ৯, ২০২২, https://hdr.undp.org/data-center/specific-country-data#/countries/BGD
১০৩) জাহাঙ্গির হুসেন, ‘গ্রোয়িং ইনকাম ইনিকুয়ালিটি ইন বাংলাদেশ কজেস কনসার্ন’, দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস, অগস্ট ৪, ২০২১, https://thefinancialexpress.com.bd/views/growing-income-inequality-in-bangladesh-causes-concern-1627918086
১০৪) ‘বাংলাদেশ’, ডব্লিউআইডি – ওয়ার্ল্ড ইনিকুয়ালিটি ডেটাবেস, অক্টোবর ২৮, ২০২২,
https://wid.world/country/bangladesh/
১০৫) ‘বাংলাদেশ’, ডব্লিউআইডি – ওয়ার্ল্ড ইনিকুয়ালিটি ডেটাবেস
১০৬) ‘অ্যাডজাস্টেড সেভিংস : গ্রস সেভিংস (% অব জিএনআই)’, দ্য ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক, ২০২০, https://data.worldbank.org/indicator/NY.ADJ.ICTR.GN.ZS?end=2020&locations=BD&start=2010
১০৭) আর্তুর রিব্যাজ এবং ফিতিম মেক্সহুয়ানি, ‘দি ইমপ্যাক্ট অব সেভিংস অন ইকোনমিক গ্রোথ ইন আ ডেভেলপিং কান্ট্রি (দ্য কেস অব কোসোভো)’, জার্নাল অফ ইনোভেশন অ্যান্ড অন্ত্রঁপ্রেনরশিপ ১০, নম্বর ১ (জানুয়ারি ৮, ২০২১) : ১, https://innovation-entrepreneurship.springeropen.com/articles/10.1186/s13731-020-00140-6
১০৮) ‘সার্ভিসেস, ভ্যালু অ্যাডেড (% অব জিডিপি) – বাংলাদেশ’, দ্য ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক
১০৯) ‘সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০২২’, সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট, https://dashboards.sdgindex.org/rankings
১১০) ‘সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি) ইন বাংলাদেশ : কি চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড মিসিং লিঙ্কস : ফোকাস শুড বি অন ইন্টারনাল রিসোর্স মোবিলাইজেশন অ্যান্ড এফেক্টিভ ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউশনস’, সোশ্যাল ওয়াচ, https://www.socialwatch.org/node/18086
১১১) ‘সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০২২’
১১২) কৌশিক বসু, ‘হোয়াই ইজ বাংলাদেশ ব্লুমিং,’ প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, এপ্রিল ২৩, ২০১৮,
https://www.project-syndicate.org/commentary/bangladesh-sources-of-economic-growth-by-kaushik-basu-2018-04
১১৩) সুসারা জে জানসেন ভ্যান রেনসবার্ফ, রিয়ান রোসো এবং উইলমা ভিভিয়ারস, ‘লিবারাইজিং বাংলাদেশ’জ সার্ভিস ট্রেড : ইজ জয়েনিং ট্রেড ইন সার্ভিসেস এগ্রিমেন্ট দ্য ওয়ে টু গো?’ সাউথ এশিয়া ইকোনমিক জার্নাল ২১, নম্বর ১, (মার্চ ২০২০) : ৯৯-১২১, https://journals.sagepub.com/doi/pdf/10.1177/1391561420903198
১১৪) এডমার এল বাচা, ‘আ থ্রি-গ্যাপ মডেল অব ফরেন ট্রান্সফারস অ্যান্ড দ্য জিডিপি গ্রোথ রেট ইন ডেভেলপিং কান্ট্রিজ,’ জার্নাল অব ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস ৩২, নম্বর ২ (এপ্রিল ১, ১৯৯০) : ২৭৯-৯৬,
https://econpapers.repec.org/article/eeedeveco/v_3a32_3ay_3a1990_3ai_3a2_3ap_3a279-296.htm
১১৫) ‘হাউ ক্লাইমেট চেঞ্জ ডিপেনস বাংলাদেশ’জ ফ্র্যাজিলিটি’, ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিস, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২১, https://www.usip.org/publications/2021/09/how-climate-change-deepens-bangladeshs-fragility
১১৬) নীলাঞ্জন ঘোষ, ‘প্রমোটিং আ ‘জিডিপি অব দ্য পুওর’ : দি ইমপ্যারেটিভ অফ ইন্টিগ্রেটিং ইকোসিস্টেমস ভ্যালুয়েশন ইন ডেভেলপমেন্ট পলিসি,’ ওআরএফ অকেশনাল পেপারস, মার্চ ১৭, ২০২০, https://staging.orfonline.org/research/promoting-a-gdp-of-the-poor-the-imperative-of-integrating-ecosystems-valuation-in-development-policy-63412/
১১৭) ‘ক্রিয়েটিং আ গ্রিন অ্যান্ড সাসটেনেবল গ্রোথ পাথ ফর বাংলাদেশ’, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক, জুন ৮, ২০২২, https://www.worldbank.org/en/news/feature/2022/06/06/creating-a-green-and-sustainable-growth-path-for-bangladesh
১১৮) ক্যাথরিন রিক, লরেন দ্রোয়েত, কেন ক্যালডেইরা এবং মাসসিমো তাভোনি, ‘কান্ট্রি-লেভেল সোশ্যাল কস্ট অব কার্বন’, নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ ৮, নম্বর ১০, (অক্টোবর ২০১৮) : ৮৯৫-৯০০, https://doi.org/10.1038/s41558-018-0282-y
১১৯) নীলাঞ্জন ঘোষ, ‘দি এনডিওরিং চ্যালেঞ্জেস ইন মোবিলাইজিং গ্রিন ফিন্যান্সেস’, ওআরএফ এক্সপার্ট স্পিকস, নভেম্বর, ২০২১, https://staging.orfonline.org/expert-speak/the-enduring-challenges-in-mobilising-green-finance/
১২০) পিটার স্টেইন এবং এমিল উদ্ধামার, ‘চায়না ইন আফ্রিকা : দ্য রোল অব ট্রেড, ইনভেস্টমেন্টস, অ্যান্ড লোনস অ্যামিডস্ট শিফটিং জিওপলিটিক্যাল অ্যাম্বিশনস’, ওআরএফ অগস্ট ২৫, ২০২১, https://staging.orfonline.org/research/china-in-africa/
১২১) মালঞ্চ চক্রবর্তী, ‘ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন টুওয়ার্ডস দ্য এসডিজিস : দি ইন্ডিয়া মডেল’, ওআরএফ অকেশনাল পেপারস, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২, https://staging.orfonline.org/research/development-cooperation-towards-the-sdgs/
১২২) ‘বাংলাদেশ’জ ফরেন ডেট টু জিডিপি রেশিও ১১%, ওয়েল বিলো দি আইএমএফ থ্রেশহোল্ড অব ৪০%’, অল ইন্ডিয়া রেডিও, অগস্ট ১২, ২০২২
১২৩) ‘বাংলাদেশ’জ এক্সটার্নাল ডেট টু এক্সপোর্ট রেশিও হাইয়েস্ট অ্যামং ফাইভ এশিয়ান কান্ট্রিজ’, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, অগস্ট ২৭, ২০২২, https://www.tbsnews.net/economy/bangladeshs-external-debt-export-ratio-highest-among-5-asian-countries-485082
১২৪) ‘শর্ট-টার্ম ডেট (% অব টোটাল এক্সটার্নাল ডেট) – বাংলাদেশ’, দ্য ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক, ২০২০, https://data.worldbank.org/indicator/DT.DOD.DSTC.ZS?locations=BD
১২৫) ‘ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট ইন্ডিকেটরস’, দ্য ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক, https://databank.worldbank.org/source/world-development-indicators
১২৬) ‘বাংলাদেশ আনএমপ্লয়মেন্ট রেট ১৯৯১-২০২২’, ম্যাক্রো ট্রেন্ডস, ২০২২, https://www.macrotrends.net/countries/BGD/bangladesh/unemployment-rate
১২৭) ‘হোম পেজ’, বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক, https://www.bb.org.bd/en/index.php
১২৮) ‘বাংলাদেশ আউটস্ট্যান্ডিং এক্সটার্নাল ডেট – ২০২২ ডেটা – ২০২৩ ফোরকাস্ট’, অগস্ট ২০২২, https://tradingeconomics.com/bangladesh/external-debt
মতামত লেখকের নিজস্ব।