দিল্লির জলের উৎসগুলির পর্যালোচনা থেকে জানা যায় যে রাজধানী শহরে সরবরাহের জন্য রাজ্যের অভ্যন্তরে এবং বাইরে থেকে জল সংগ্রহ করা হলেও সরবরাহের ঘাটতি রয়েছে।

ভারতের প্রায় ২৩ মিলিয়ন বাসিন্দার জনবহুল রাজধানী দিল্লিতে জলের চাহিদা তার সরবরাহের চেয়ে বেশি। দিল্লি জল বোর্ড (ডিজেবি) নামক শহর সরকারের জল সরবরাহ বিভাগ অনুসারে দৈনিক জলের চাহিদা প্রায় ১,১৫০ মিলিয়ন গ্যালন (এমজিডি), যেখানে জল সরবরাহ করা হয় ৯৩৫ এমজিডি। বর্তমান পরিস্থিতিতে দিল্লির অনেক বাসিন্দা, বিশেষ করে যাঁরা পৌর সুযোগসুবিধাহীন এলাকায় বসবাস করেন, তাঁদের পানীয় জল পাওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ নেই।
যমুনা নদী দিল্লির পূর্বাঞ্চলের মধ্য দিয়ে যায় এবং নদীর দিল্লির অংশে প্রবাহিত জল শহর সরকার শোধন করে নাগরিকদের বিতরণের জন্য সরবরাহ করে।
এই নিবন্ধে ডিজেবি নাগরিকদের বিতরণের জন্য কী কী উৎস থেকে জল সংগ্রহ করে তা বর্ণনা করার চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও এই ধরনের তথ্য জল ক্ষেত্রের উন্নত পরিকল্পনা ও উন্নয়ন–সহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য উপযোগী, তবে তা সঠিকভাবে পাবলিক ডোমেনে পাওয়া যায় না। এই নিবন্ধটির লক্ষ্য সেই জ্ঞানের শূন্যতা পূরণ করা।
ভূপৃষ্ঠের জল
স্থলভাগে জলাশয়ে পাওয়া জল হল দিল্লির জলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উৎস৷ এই জল, যা সাধারণত ভূপৃষ্ঠের জল হিসাবে উল্লেখিত হয়, দিল্লি এবং তার আশেপাশে নদী এবং খালগুলিতে পাওয়া যায়।
যমুনা নদী দিল্লির পূর্বাঞ্চলের মধ্য দিয়ে যায় এবং নদীর দিল্লির অংশে প্রবাহিত জল শহর সরকার শোধন করে নাগরিকদের বিতরণের জন্য সরবরাহ করে। বছরের বিভিন্ন সময়ে নদীর জলের পরিমাণ পরিবর্তিত হয়। বর্ষার দুই থেকে তিন মাসে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) জলস্তর উঁচু থাকে। তবে গ্রীষ্মের মাসগুলিতে (এপ্রিল থেকে জুন) জলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে নেমে যায় দিল্লিসহ বেশ কয়েকটি উত্তর ভারতীয় রাজ্যের উচ্চ চাহিদার কারণে, যারা সবাই তাদের চাহিদা মেটাতে যমুনা নদীর জল ব্যবহার করে (একটি জলবণ্টন চুক্তি অনুসারে)।
এ কথাও উল্লেখ করা হয় যে যমুনা নদীর জলের গুণমান অপরিশোধিত গার্হস্থ্য ও শিল্পের বর্জ্য জলের পাশাপাশি আবর্জনা নিষ্পত্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়। এই ঘটনাটি বিশেষত দিল্লির কালিন্দী কুঞ্জ এলাকার কাছে নদীতে বিশেষভাবে স্পষ্ট।
বছরের অধিকাংশ মাসে যমুনার দিল্লির অংশে জলের নিম্ন স্তর ও নিম্ন মান বাইরের ভূপৃষ্ঠের জলের উৎসের উপর দিল্লির নির্ভরতার গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
প্রতি বছর শীতের মরসুম শুরু হওয়ার আগেই খালটি বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উত্তরপ্রদেশ সেচ বিভাগ বন্ধ করে দেয়।
প্রথম বাহ্যিক উৎস হল আপার গঙ্গা ক্যানাল, যা প্রতিবেশী রাজ্য উত্তরপ্রদেশের মধ্য দিয়ে যায়। এটি জমিতে সেচের জন্য নির্মিত হয়েছিল। এর কিছু জল মানুষের পানীয় জলের চাহিদা মেটাতেও ব্যবহার করা হয়। এই খালটি উত্তর ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের হরিদ্বারে গঙ্গা নদী থেকে উৎপন্ন হয়েছে এবং উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের মধ্য দিয়ে গেছে। উত্তরপ্রদেশের মুরাদনগরে খালটি দিল্লির পূর্ব সীমানার সবচেয়ে কাছে আসে, যেখানে খালের জল দিল্লিতে আনার জন্য পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এই জল শোধন করা হয় এবং দিল্লির দক্ষিণ, পূর্ব ও উত্তর–পূর্ব এলাকায় সরবরাহ করা হয়। প্রতি বছর শীতের মরসুম শুরু হওয়ার আগেই খালটি বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণের (পলি তোলার) জন্য উত্তরপ্রদেশ সেচ বিভাগ বন্ধ করে দেয়। এই সাময়িক বন্ধের ফলে দিল্লিতে জল সরবরাহ ব্যাহত হয়।
দ্বিতীয় বাহ্যিক উৎসটি প্রতিবেশী রাজ্য হরিয়ানায় দিল্লির উত্তরে অবস্থিত। এটি দুটি খাল নিয়ে গঠিত: পশ্চিম যমুনা খাল ও মুনাক খাল (ক্যারিয়ার লাইনযুক্ত চ্যানেল হিসাবেও পরিচিত)। পশ্চিম যমুনা খাল হরিয়ানার যমুনা নগর জেলার হথনিকুন্ড ব্যারেজে যমুনা নদী থেকে উৎপন্ন হয়েছে, আর মুনাক খাল হল হরিয়ানার পানিপথ শহরের উত্তর–পশ্চিমে কারনাল জেলার মুনাক গ্রামে শুরু হওয়া পশ্চিম যমুনা খালের একটি শাখা। এই দুটি খালই যমুনা নদীর জলকে দক্ষিণ দিকে বহন করে এবং দিল্লির জন্য জলের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে ওঠে৷ মুনাক খালের বেশ কয়েকটি শাখা রয়েছে যেগুলির একটি দিল্লির হায়দরপুরে শেষ হয়েছে। এটি দিল্লি উপশাখা নামে পরিচিত। অতীতে হরিয়ানা সরকার দিল্লিতে অপ্রতুল জল সরবরাহ করেছে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, এবং সেই সঙ্গে স্থানীয় জনসম্প্রদায় দ্বারা খালের জলে আবর্জনা নিষ্পত্তি করার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৬ সালে চাকরির কোটার দাবিতে স্থানীয় বিক্ষোভকারীরা খালের পরিকাঠামোর ক্ষতি করলে এই খাল থেকে জল সরবরাহ ব্যাহত হয়েছিল।
পশ্চিম যমুনা খাল হরিয়ানার যমুনা নগর জেলার হথনিকুন্ড ব্যারেজে যমুনা নদী থেকে উৎপন্ন হয়েছে, আর মুনাক খাল হল হরিয়ানার পানিপথ শহরের উত্তর–পশ্চিমে কারনাল জেলার মুনাক গ্রামে শুরু হওয়া পশ্চিম যমুনা খালের একটি শাখা।
তৃতীয় বাহ্যিক উৎস হল ভাকরা স্টোরেজ , যা উত্তরের পার্বত্য রাজ্য হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত। এই সঞ্চয়স্থান থেকে রাভি ও বিয়াস নদীর জল দিল্লিসহ উত্তর ভারতীয় রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে খালের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। ভাকরা খাল থেকে পশ্চিম যমুনা খাল পর্যন্ত জল নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি লিঙ্ক ক্যানেল তৈরি করা হয়েছে। ভাকরা স্টোরেজের জল খাল–ব্যবস্থার মাধ্যমে হরিয়ানায় পৌঁছনোর পরে জল পশ্চিম যমুনা খাল ও মুনাক খালের মাধ্যমে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়।
মাটির নিচের জল
দিল্লির প্রশাসনিক সীমানার মধ্যে বিভিন্ন উৎস থেকে খুব বেশি জল পাওয়া যায় না। যমুনার দিল্লির অংশের ঘটনা উপরে বর্ণিত হয়েছে। অন্য উৎস হল স্থলভাগের নিচের জল, যাকে সাধারণত ভূগর্ভস্থ জল বলে। ভূগর্ভস্থ জল আহরণের জন্য দিল্লির বিভিন্ন অংশে, যেমন যমুনা নদীর কাছে উত্তর দিল্লির পাল্লা প্লাবনভূমি এলাকায়, শহর সরকার নলকূপ ও র্যানি কূপ স্থাপন করেছে। ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলনের জন্য শহরের অন্যান্য অঞ্চলে কোথায় ভাল ভূগর্ভস্থ জলের স্তর রয়েছে তা দেখা হচ্ছে।
বিভিন্ন কারণে দিল্লিতে ভূগর্ভস্থ জলের প্রাপ্যতা কম। প্রথমত, দিল্লি দেশের একটি আধা–শুষ্ক অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে কম বৃষ্টিপাত হয় এবং সেই কারণে ভূগর্ভস্থ জলের পরিপূরণ কম হয়। দ্বিতীয়ত, দিল্লির হাইড্রো–জিওলজিক্যাল প্রোফাইল–এর বৈশিষ্ট হল পলি গঠন ও কোয়ার্টজাইট শিলা, যা ভূগর্ভস্থ জলের সঞ্চয়কে প্রভাবিত করে। অবশেষে, ভূগর্ভস্থ জলের অতিরিক্ত শোষণের ফলে শহরের অনেক অংশে জলস্তর হ্রাস পেয়েছে। এই ক্ষেত্রে অন্য সমস্যাটি ভূগর্ভস্থ জলের নিম্নমানের সঙ্গে সম্পর্কিত, কারণ এতে অনুমোদিত সীমার অতিরিক্ত বিষাক্ত ধাতুর উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়।
বৃষ্টি থেকে জল
বৃষ্টিপাত থেকে প্রাপ্ত কিছু পরিমাণ জলও সংগ্রহ করা হয়। এই উদ্দেশ্যে, সরকারের সমস্ত প্রাঙ্গণ/ভবনগুলিতে রেন ওয়াটার হার্ভেস্টিং কাঠামো স্থাপনের নীতি নেওয়া হয়েছে। নাগরিকদের জন্য তাদের ১০০ বর্গ মিটার এবং তার বেশি পরিমাপের সম্পত্তিতে রেন ওয়াটার হার্ভেস্টিং কাঠামো বসানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ভূগর্ভস্থ জল আহরণের জন্য দিল্লির বিভিন্ন অংশে, যেমন যমুনা নদীর কাছে উত্তর দিল্লির পাল্লা প্লাবনভূমি এলাকায় শহর সরকার নলকূপ ও র্যানি কূপ স্থাপন করেছে।
ভৌত অগ্রগতির রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে যে হাউজিং সোসাইটি, হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর–সহ অনেক সরকারি ও বেসরকারি ভবনে রেন ওয়াটার হার্ভেস্টিং কাঠামো স্থাপন করা হয়েছে। এই জল ভূগর্ভস্থ জলের পরিপূরণ করছে এবং সঞ্চিত বৃষ্টির জল পান করা না হলেও বাগান করা, গাড়ি ধোয়া ইত্যাদির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। যাই হোক, রেন ওয়াটার হার্ভেস্টিং–এর সম্পূর্ণ সম্ভাবনা অব্যবহৃত থেকে গেছে, কারণ অনেক সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তির মালিক এখনও কাঠামোগুলি স্থাপন করতে পারেনি। অকার্যকর কাঠামোর সমস্যাটিও রয়েছে।
ব্যবহৃত জল থেকে জল
নগর সরকার পয়ঃনিষ্কাশন নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছে, এবং ব্যবহৃত জল বা বর্জ্য/নর্দমা পুনঃব্যবহারের জন্য বিভিন্ন স্থানে একাধিক শোধনাগার স্থাপন করেছে। উপলব্ধ তথ্য অনুসারে, শহরের জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ পয়ঃনিষ্কাশন নেটওয়ার্কের আওতায় রয়েছে, এবং উৎপন্ন বর্জ্য জলের ৭০ শতাংশ শোধন করা হয়।
পরিশোধিত বর্জ্য জল সেন্ট্রাল পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট, নিউ দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিল, দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন ও হর্টিকালচার ডিপার্টমেন্টে পান করা ব্যতীত অন্য ব্যবহারের জন্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
উপসংহার
দিল্লির জন্য জলের উৎসগুলির পর্যালোচনা থেকে জানা যায় যে শহর সরকার তার জলের চাহিদা মেটাতে একাধিক বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উৎসের উপর নির্ভর করে। বাহ্যিক উৎসগুলির মধ্যে আছে আপার গঙ্গা ক্যানেলের মাধ্যমে উত্তরপ্রদেশ থেকে প্রাপ্ত গঙ্গা নদীর জল, হরিয়ানার যমুনা নদীর পশ্চিম যমুনা খাল ও মুনাক খালের জল, এবং হিমাচল প্রদেশের রাভি ও বিয়াস নদীর জল যার বাহক হরিয়ানার খালগুলি। দিল্লির মধ্যে জলের উৎস হল যমুনা নদীর দিল্লির অংশ, ভূগর্ভস্থ জল, বৃষ্টির জল ও বর্জ্য জল।
এই তথ্য পাওয়া গেছে যে হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ ও হিমাচল প্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত ভূপৃষ্ঠের জলের বিভিন্ন উৎস থেকে দিল্লি তার ৯০ শতাংশেরও বেশি জল পায়। অর্থাৎ দিল্লি তার জলের চাহিদা মেটানোর জন্য বাহ্যিক উৎসের উপর খুব বেশি নির্ভরশীল। অধিকন্তু, নগর সরকার কাঙ্ক্ষিত ভূগর্ভস্থ জলের স্তর ও তার গুণমান নিয়ে, বর্জ্য জল শোধন করার ক্ষেত্রে, এবং বৃষ্টির জল সংগ্রহের ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে৷ সমস্যাগুলির দ্রুত সমাধান নাগরিকদের জন্য আরও ভাল জল সরবরাহ নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।
মতামত লেখকের নিজস্ব।