ত্রিকোণ অংশীদারি আজকের সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের সমাধান দিতে পারে, এবং এসডিজি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

চিন ও ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলির দ্রুত বৃদ্ধি বিশ্ব বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং এমনকি উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রেও নাটকীয় পরিবর্তন এনেছে। নতুন গতিশীলতা বৈশ্বিক শক্তি কাঠামোকেও পরিবর্তিত করেছে, এবং উত্তর–দক্ষিণ ও দক্ষিণ–দক্ষিণ সম্পর্কের ভূদৃশ্য বদলে দিয়েছে। এখন উন্নয়ন সহযোগিতার একটি ধরন হিসাবে ত্রিকোণ সহযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং অনেক ঐতিহ্যবাহী দাতা দেশ ও রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থাগুলি ত্রিকোণ অংশীদারির মাধ্যমে দক্ষিণ–দক্ষিণ সহযোগিতাকে ক্রমশ বেশি করে সমর্থন করছে। ‘ত্রিকোণ সহযোগিতা’ শব্দবন্ধের সংজ্ঞা নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও বিস্তৃত অর্থে শব্দবন্ধটি এমন প্রকল্প ও উদ্যোগকে বোঝায় যা জ্ঞান ভাগ করে নিতে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে উন্নয়নের সমস্যার সমাধান করতে ঐতিহ্যগত দাতা ও দক্ষিণের দেশগুলির তুলনামূলক সুবিধাগুলিকে একত্র করে।
এখন উন্নয়ন সহযোগিতার একটি ধরন হিসাবে ত্রিকোণ সহযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং অনেক ঐতিহ্যবাহী দাতা দেশ ও রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থাগুলি ত্রিকোণ অংশীদারির মাধ্যমে দক্ষিণ–দক্ষিণ সহযোগিতাকে ক্রমশ বেশি করে সমর্থন করছে।
ভারত, দক্ষিণের একটি প্রধান উন্নয়ন অংশীদার, প্রাথমিকভাবে নিজেকে ত্রিকোণ অংশীদারি থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল, কারণ এটি অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংগঠন/উন্নয়ন সহায়তা কমিটির মডেলের থেকে উন্নয়ন সহযোগিতা অনেকটা ভিন্নভাবে তৈরি করেছিল—যা চাহিদাচালিত উন্নয়ন, পারস্পরিক সুবিধা, সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ‘বিশেষ শর্তবিহীন’ উন্নয়ন অংশীদারির নীতিগুলির উপর জোর দেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অবশ্য দেশটি ব্রিটেন (ইউকে), জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো কয়েকটি দেশের সঙ্গে সহযোগিতায় যোগ দিয়ে ত্রিকোণ অংশীদারির দিকে ঝোঁক দেখিয়েছে।
ভারতে বিদেশ মন্ত্রক ও সাবেক ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট (যার এখনকার নাম ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অফিস) ‘তৃতীয় দেশগুলিতে সহযোগিতার জন্য অংশীদারির অভিপ্রায়ের বিবৃতি’ স্বাক্ষর করেছে, যা অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলির সঙ্গে যৌথভাবে সহায়তা করার জন্য দুই দেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। ২০১৭ সালে ভারত ও জার্মানি আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে তাদের উন্নয়ন অংশীদারির ক্ষেত্রে একে অপরের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে। জাপান ও ভারত ২০১৭ সালে এশিয়া আফ্রিকা গ্রোথ করিডোর প্রোগ্রাম (এখন প্রোজেক্ট ফর ফ্রি অ্যান্ড ওপন ইন্দো–প্যাসিফিক) চালু করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত বৈশ্বিক উন্নয়নের জন্য ত্রিকোণ সহযোগিতার নীতি সংক্রান্ত বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে; এবং আফ্রিকায় ব্রিটেন ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে কিছু ত্রিকোণ প্রকল্পে সহযোগিতা করেছে।
পরিকাঠামো ক্ষেত্র, যার বৈশিষ্ট বড় ধরনের বিনিয়োগ, উচ্চ ঝুঁকি, দীর্ঘ মেয়াদ এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা, তা বিশেষভাবে ত্রিকোণ অংশীদারির জন্য উপযুক্ত।
ত্রিকোণ সহযোগিতা অনেক সুবিধা দেয়। কিছু প্রধান সুবিধা হল সম্পদ জোগাড় করা, খরচ–কার্যকারিতা এবং বিভিন্ন ধরনের অংশীদারের তুলনামূলক সুবিধার সমন্বয়। যেমন, ত্রিকোণ অংশীদারি আজকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলির সমাধান দিতে পারে: জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশগত অবক্ষয়, দারিদ্র্য, এবং জলবায়ু–সহনশীল পরিকাঠামোর অভাব। এইভাবে এই ধরনের অংশীদারি উদ্ভাবনী, দক্ষ, ও সহযোগিতামূলক পথে স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পরিকাঠামো ক্ষেত্র, যার বৈশিষ্ট বড় ধরনের বিনিয়োগ, উচ্চ ঝুঁকি, দীর্ঘ মেয়াদ এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা, তা বিশেষভাবে ত্রিকোণ অংশীদারির জন্য উপযুক্ত। এই সব স্পষ্ট সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এই পদ্ধতির প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে সবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, কারণ বিভিন্ন দেশ ক্রমশ বেশি করে চিনা উন্নয়ন সহায়তার নাটকীয় বৃদ্ধিকে মোকাবিলা করার প্রয়োজন অনুভব করছে, এবং বুঝতে পারছে যে তা করার জন্য সম্পদ ও সক্ষমতা একত্র করা সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে।
যাই হোক, বর্তমানে ত্রিকোণ অংশীদারি ভারতের সামগ্রিক উন্নয়ন সহযোগিতা বাজেটের একটি ছোট অংশ। ত্রিকোণ সহযোগিতা নিয়ে ভারতের অভিজ্ঞতা এখনও পর্যন্ত মিশ্রিত। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, ত্রিকোণ অংশীদারি অন্য নানা কারণের সঙ্গে মিলে সফল হয়। সেগুলো নকশাগতভাবে ত্রিকোণ ছিল না। ইথিওপিয়াতে একটি আইসিটি কেন্দ্রের জন্য ভারত–ইউএই প্রকল্পের মতো কিছু প্রকল্প বাস্তবে অনেক বিলম্বের সম্মুখীন হয়েছে। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ একমত যে ত্রিকোণ অংশীদারির ক্ষেত্রে তহবিল নয়, মূল উদ্বেগের কারণ হিসাবে দেখা দেয় বাস্তবায়নের বিষয়টি, এবং তা ঘটে সংশ্লিষ্ট তিনটি পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি, আইন ও ক্ষমতার পার্থক্যের কারণে।[১] গ্রহীতা দেশগুলিও তাদের নিজস্ব সংস্থা এবং একযোগে দুটি দেশের সঙ্গে আলোচনার ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগের কারণে এই ধরনের বোঝাপড়ায় ততটা আগ্রহী হয় না। অতএব, বেশিরভাগ প্রাপক দেশ প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য একটি দেশের সঙ্গে অংশীদারি পছন্দ করে।
বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ একমত যে ত্রিকোণ অংশীদারির ক্ষেত্রে তহবিল নয়, মূল উদ্বেগের কারণ হিসাবে দেখা দেয় বাস্তবায়নের বিষয়টি, এবং তা ঘটে সংশ্লিষ্ট তিনটি পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি, আইন ও ক্ষমতার পার্থক্যের কারণে।
যদিও ত্রিকোণ অংশীদারির উল্লেখযোগ্য সুবিধা রয়েছে, কিন্তু সেখানে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে ভারতের বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গির মূলে রয়েছে ভারতীয় বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির এবং ভারতীয় ইনপুটগুলির ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দেওয়া। অন্য দেশগুলি যারা তাদের নিজস্ব সংস্থাগুলির পক্ষ নিতে চায় তাদের জন্য বিষয়টি সমস্যাযুক্ত হতে পারে। এছাড়াও, ভারতের বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, প্রাপক দেশগুলি তাদের নিজস্ব অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রকল্পগুলি নির্বাচন করে। ত্রিকোণ অংশীদারির অধীনে প্রকল্প নির্বাচনের প্রক্রিয়া কী হবে? প্রক্রিয়াটি কি চাহিদা–চালিত হবে? তা ছাড়াও যে আর্থিক ব্যবস্থা অনুসরণ করা হবে তা নিয়ে এবং কীভাবে ঝুঁকি ভাগ করা হবে সে সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রয়েছে।
ত্রিকোণ অংশীদারিকে সক্ষমতা প্রদানকারী শর্তগুলি হল প্রাপক দেশগুলিতে ব্যাঙ্কযোগ্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলির সনাক্তকরণ, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং প্রকল্পগুলির মসৃণ বাস্তবায়নের জন্য অংশীদারদের মধ্যে আরও ভাল সমন্বয়। কিছু বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেন যে প্রাপক দেশের চাহিদা এবং অগ্রাধিকারের প্রাধান্য থাকা উচিত, এবং অংশীদার দেশগুলির সংগ্রহের (প্রোকিওরমেন্ট) নিয়মের পরিবর্তে প্রাপক দেশের সংগ্রহের নিয়মগুলি প্রয়োগ করা উচিত।[২] বড় পরিকাঠামোগত প্রকল্পের উচ্চ ঝুঁকির কারণে একটি ত্রিকোণ বিন্যাসে প্রাথমিকভাবে ছোট প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা ভাল। ছোট প্রকল্পের সাফল্য ত্রিকোণ অংশীদারির প্রতি আস্থা তৈরি করতে সাহায্য করবে এবং ছোট প্রকল্প থেকে নেওয়া শিক্ষা এই বিন্যাসের মাধ্যমে বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সাহায্য করবে।
[১] ওআরএফ গোলটেবিল ‘পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ত্রিকোণ সহযোগিতা – সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ’, ১৩ অক্টোবর, ২০২২
[২] ওআরএফ গোলটেবিল ‘পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ত্রিকোণ সহযোগিতা – সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ’, ১৩ অক্টোবর, ২০২২
মতামত লেখকের নিজস্ব।